শীত বিদায় হয়েছে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতিতে চলছে বসন্ত। এরই মাঝে ফুটেছে নানান রং এর ফুল। শিমুল গাছে তাকালেই দেখা মিলছে লাল রং এর ফুল।
যেন আকাশে ডানা মেলেছে। গাছের ডালে এবং ফুলে বসে কোকিল পাখি মধুর কণ্ঠে কুহুতান করছে। ভর দুপুরে এই দৃশ্য আকৃষ্ট করে পথচারীদের। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এখন এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফসলের মাঠ সবুজে ছেয়ে আছে।
মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। ভেসে আসছে শিমুল ফুলের ঘ্রাণ। কোথাও টুকটুকে লাল, কোথাও হলুদ, কোথাও কমলা। দেখে মনে হয়, কে যেন মুঠো মুঠো রং ছড়িয়ে দিয়েছে চারপাশে। প্রকৃতির এই রং, রূপ, বৈচিত্র্যের কারণ ঋতুরাজ বসন্ত। মৌমাছির গুঞ্জন আর পাখির কলকাকলিতে মুখর এলাকা।
এ যেন কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে দেয় শিমুল ফুল।
তবে কালের বিবর্তনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন কমে যাচ্ছে। এক যুগ আগেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে—কানাচে, রাস্তায়, পতিত ভিটায় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো এসেছে বসন্ত।
এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে শিমুল গাছ। জানা যায়, এ গাছের সব অংশেই রয়েছে ভেষজগুণ। শীতের শেষে শিমুলের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল।
চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে যায়। বাতাসে আপনা—আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে দূর—দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই নতুন গাছের জন্ম হয়। অন্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে রোপণ করে না।
নেওয়া হয় না কোনো যত্ন। প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বর্তমানে মানুষ এ গাছ কারণে—অকারণে কেটে ফেলছে।
অতীতে নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি, দিয়াশলাইয়ের কাঠি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ কমে যাচ্ছে শিমুল গাছ।