বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বিভিন্নস্থানে সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে স্পর্শকাতর রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন হাতুরে কথিত চিকিৎসকরা। এসব গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনেক সময় নিজেদের অজান্তেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন গরীব ও অসহায় সাধারণ রোগীরা।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে সাবেক বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার শিকারপুর বন্দরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার রায় “নাইস হেলথ কেয়ার” নামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে বসে আছেন। বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রোগী রয়েছেন তার চেম্বারে। চিকিৎসক সঞ্জয় রায় নিজেই। তিনি সেখানে মেডিসিন, গাইনী, শিশুরোগ, কোমর, ঘারের ব্যাথা, প্যারালাইসিস, নাক, কান, গলা, পাইলস, চর্ম ও অর্শরোগের মত প্রায় অর্ধশত স্পর্শকাতর রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। নিজেই চিকিৎসক সেজে হাজারো রোগীদের সাথে প্রতারনা করে এসব রোগের চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়। সঞ্জয় তার চিকিৎসা কেন্দ্রের একটু অদূরে নিজেই একটি ডায়গনষ্টিক সেন্টার খুলেছেন এবং তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে আর সেখানে পাঠিয়ে ইচ্ছানুযায়ী টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি চিকিৎসার নামে সাধারন অসহায় রোগীদের সাথে এ ধরনের প্রতারনা করে আসছে। শিকারপুর বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, সঞ্জয় রায় একজন পল্লী চিকিৎসক হয়ে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর রোগের চিকিৎসা ও রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষ-নিরীক্ষা দিচ্ছেন। তবে সে যেভাবে চিকিৎসার নামে সাধারন রোগীদের সাথে প্রতারনা করছেন তা সত্যিই দু:খজনক। এ বিষয়ে পল্লী চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে সংবাদকর্মীদের বলেন- ‘বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসের অনুমতি নিয়েই আমি এখানে ডাক্তারি করি।
আপনাদের কাছে আমি কোনো কিছু বলতে বাধ্য নই। আপনারা সিভিল সার্জনকে গিয়ে বলেন, যা বলার আমি তার সাথে বলবো।’ এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: একেএম শামছউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘তিনি দীর্ঘ ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েও নিজেকে অভিজ্ঞ লিখতে পারছেন না। অথচ পল্লী চিকিৎসক সঞ্জয় রায় কিভাবে নারী ও শিশুসহ স্পর্শকাতর বিভিন্ন রোগের অভিজ্ঞ হলো সেটা তার জানা নেই।’ এই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাঁতুড়ে চিকিৎসকদের অপচিকিৎসা ঠেকাতে খুব শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন জানান, ‘পল্লী চিকিৎসকদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারা শুধু জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি এ ধরনের সাধারন রোগের রোগিদের প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারবেন। তবে এর বাইরে যদি কোনো পল্লী চিকিৎসক রোগীদের সাথে প্রতারণা করে থাকে সেটা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’