মাত্র একদিন পরে আগামী ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীসহ ৩ জন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তবে এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকার প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দি হিসেবে দলের মনোনয়ন বি ত বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ধরা হচ্ছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করতে স্বতন্ত্র হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন আরেক প্রার্থী। সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হলে এই আসনে এবার ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন সাধারন ভোটাররা। এই ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচনী মাঠের সর্বত্র এখন সরগরম। আবার প্রায় প্রতিদিনই ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা আতংকিত হয়ে পড়ছে সাধারন ভোটাররা। খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই পূর্বপরিচিত। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু। যিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের তৎকালীন সময়ে উজিরপুর আলহাজ্ব বি.এন.খান ডিগ্রী কলেজের ছাত্র ঐক্য পরিষদের যুগ্ন আহব্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০০১ সাল থেকে তিনি (বাচ্চু) উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে ২০০৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দলীয় কাউন্সিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু। এখনও তিনি সেই পদের দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আ: মজিদ সিকদার বাচ্চু নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় বাদ পড়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান ইকবাল। দলীয় মনোনয়ন বি ত হয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন। তবে মনোনয়ন বি ত হওয়ার বিষয়ে দলীয় একাধিক সূত্র জানা গেছে, হাফিজুর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি বহু বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন। তাই দল থেকে তিনি মনোনয়ন বি ত হয়েছেন এবং তাকে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদ বাদল। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দি করছেন। তবে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় উজিরপুর উপজেলার সর্বত্র এখন উত্তাল। একেক সময় একেক রকম শোডাউনে এখানে অনেক আগ থেকেই জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। তাই সাধারণ ভোটাররা এই আসনে এবার ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাসের কথা বলছেন। কমপক্ষে ২৫ জন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চুর সাথে সমান তালে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বাদল। নৌকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও উঠান বৈঠকসহ নানা প্রচার-প্রচারণা করছে। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী কাপ-পিরিচ প্রতীকের হাফিজুর রহমান ইকবালের উল্লেখযোগ্য প্রচার-প্রচারণা দেখা না গেলেও সমর্থকরা বলছেন তিনি ভোটযুদ্ধে লড়বেন। ফলে এবার এ উপজেলার ভোটারদের অনেক মূল্যায়ন বেড়েছে। এখানে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আর ভোটাররা উপজেলায় এবার ত্রিমুখী লড়ায়ের সম্ভাবনা দেখছেন। এছাড়া নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী বিউটি খানম (হাঁস), স্বতন্ত্র সীমা রানী শীল (কলস), এ্যাডভোকেট মোর্শেদা পারভীন (ফুটবল) এবং পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী অপূর্ব কুমার বাইন রন্টু (টিউবওয়েল) ও স্বতন্ত্র খোকন চন্দ্র অরুপ (তালা) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকার প্রার্থী আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু বলেন, ‘এই সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে। ওই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই মানুষ আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। ভোটের মাঠে নৌকার ওপর অন্য প্রার্থীরা কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবেন না।’ এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান ইকবালের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে উজিরপুর উপজেলা পরিষদটি গঠিত। এ উপজেলায় মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৫৪ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৯৩ হাজার ৮ শত ১২ জন ও নারী ভোটার রয়েছেন ৯১ হাজার ৪ শত ৪৪ জন।