আট বছর আগে কুলি হিসেবে কর্মজীবন শুরু। কাজ করতেন বাবুগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে ১৫০ টাকা মজুরিতে। সরকারি গুদামের চাল এদিক-সেদিক করেই কুলি থেকে কোটিপতি বনে যায় রাজগুরু গ্রামের দিনমজুর মধু খানের ছেলে সেন্টু খান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খাদ্যগুদামের কুলির অন্তরালে অবৈধভাবে এ চাল-গম ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ৮ বছরে রাজগুরু গ্রামে তৈরি করছেন দুইতলা বিশিষ্ট আধুনিক কারুকার্যে একটি বাড়ি। রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক, নিজে ব্যবহার করেন দুটি দামি মোটরসাকেল, একই এলাকায় রয়েছে পাঁচতলা নির্মাণাধীন আরো একটি বাড়ি। পাঁচরাস্তা নামক স্থানে চলমান রয়েছে নির্মাণাধীন মার্কেট, ৮ বছরে রহমতপুর ইউনয়িনের বিভিন্ন স্থনে ক্রয় করেছেন কোটি টাকা মূল্যের জমি। মোটা অংকের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজ ঘরে নগদ টাকা রাখার জন্য রক্ষিত আছে সিন্দুক।
অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতার পরিচয়ে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান ক্রয়ের নামে অভিযুক্ত সেন্টু সিন্ডিকেট করে একাই ৪শ’ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করে খাদ্যগুদামে সরবরাহের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ লক্ষাধিক টাকা। এসব অপকর্মের পরও বহাল তবিয়তে ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন কুলি থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া সেন্টু খান।
তবে সম্প্রতি কেদারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারীর থেকে সরকারি বরাদ্ধকৃত চাল ক্রয়ের বিষয়টি সামনে এলে অভিযানে নামে র্যাব। এরপর র্যাবের ডিএডি একেএম আবু হোসেন শাহরিয়ার বাদি হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সেন্টু খানসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বর্তমানে পলাতক রয়েছেন সেন্টু খান।
জানা যায়, রাজগুরু গ্রামের দিনমজুর মধু খানের ছেলে সেন্টু খান ৮ বছর আগে বাবুগঞ্জ উপজেলার খাদ্যগুদামে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সরকারি নিয়মে প্রতিটন চাল লোড-আনলোড করতে ১৫০ টাকা মজুরিভিত্তিতে কাজ করতেন। নিজের নামে ইজারা না থাকলেও অন্যের ইজারায় হঠাৎ করেই শ্রমিক সরদার পরিচয়ে খাদ্যগুদামে আসা সরকারি খাদ্যশষ্য উঠা নামানোর কাজে নিয়োজিত হন। এরপর আস্তে আস্তে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের থেকে গোপনে বিভিন্ন সময় সরকারি চাল, গম ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন সেন্টু খান।
ওই খাদ্য গোডাউনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সেন্টু খান লেবারদের পারিশ্রমিক ও ট্রাকভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করেছে। ভয়ে কেউ টাকার জন্য বাড়াবাড়ি করেনি। বর্তমানে ফুফুর জমি জোড়পূর্বক দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন। এছাড়া মাটি কাটার জন্য সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক এনে কাজ করিয়ে বিনা টাকায় তাদের বিদায় করেছেন বলেও জানান সেন্টুর এই সহকর্মী।
সেন্টু খানের এক প্রতিবেশী (নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ) জানান, এলাকার অসহায়দের জমি-জমা বিরোধ সংক্রান্ত ব্যাক্তিদের শালিস দেন-দরবারের নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন সেন্টু খান। সুযোগ বুঝে দুর্বল ব্যক্তিদের জমি জোড়পূর্বক নিজে নামে করিয়ে নেয়ারও নজির রয়েছে। সেন্টুর কাছে সবাই অসহায়। ভয়ে কেউ মুখ খুলবে না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সেন্টু খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, সরকারি চাল চুরির ব্যাপারে সরকার জিরোটলারেন্স। সেন্টু খানের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জেনেছি, অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলে সাংগঠনিকভাবে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা আসামি গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।