গৌরনদীতে বাজার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

অবশ্যই পরুন

গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার বাজার ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আব্দুল্লাহ খান। এ সভায় বাজার ব্যবস্থাপনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বাজারে পণ্যের সরবরাহ সংকট নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে। জনগণের ভোগান্তি কমাতে এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা আনতে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আব্দুল্লাহ খান বাজারের বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ ও দাম পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ব্যবসায়ীদের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করে এই সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করছেন।

মতবিনিময় সভায় টরকী বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি শরীফ শাহাবুব হাসান উপস্থিত ছিলেন এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গৃহীত উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যবসায়ীদের মুনাফা অর্জন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ক্রেতাদের সঠিক দামে পণ্য সরবরাহ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করব যেন বাজারে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি না হয়।”

সভায় অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দও তাদের মতামত প্রদান করেন এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সাথে একসাথে কাজ করার আশ্বাস দেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে যে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি তৈরি হলে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। এজন্য পণ্য সরবরাহ চেইন এবং উৎপাদনকারীদের সাথে সমন্বয় রাখা জরুরি বলে তারা মন্তব্য করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আব্দুল্লাহ খান সভায় ব্যবসায়ীদেরকে বাজারে ন্যায্যমূল্য বজায় রাখতে সতর্ক থাকতে বলেন এবং নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, “আমরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য ক্রেতাদের যাতে অযৌক্তিক মূল্য দিতে না হয়, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া। যদি কোনো ব্যবসায়ী অসাধু পন্থা অবলম্বন করে মূল্যবৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন যে, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বাজারে পণ্যের সঠিক দামে বিক্রি নিশ্চিত করা যাবে এবং সাধারণ জনগণের ভোগান্তি কমানো সম্ভব হবে। এছাড়াও স্থানীয় কৃষকদের সাথে সমন্বয় করে সঠিক সময়ে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকেও প্রশাসনের নজর রয়েছে।

সভায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন, যা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রভাব ফেলে। তারা জানান, জ্বালানি খরচ, পরিবহন খরচ এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তারা অভিমত দেন।

বাজারে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অসুবিধা হলে দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেন যে, প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে কাজ করলে এসব সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব হবে। তারা আরও বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন সঠিক কর পরিশোধ, প্রশাসনের নিয়ম অনুসরণ এবং ব্যবসায়িক সুশাসন বজায় রাখা তাদের দায়িত্ব। তবে, কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কর বা অযাচিত নিয়মের ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়, যা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এ নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধানের প্রস্তাব করেন তারা।

গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আব্দুল্লাহ খান জানান যে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। তিনি আশ্বাস দেন যে, কোনো অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফা লোভে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশাসনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, বাজার তদারকি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এতে করে বাজারে স্বাভাবিক ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। একইসাথে তিনি ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, যাতে তাদের কার্যকলাপ জনকল্যাণমূলক হয়।

গৌরনদী উপজেলায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের যৌথ প্রচেষ্টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ বজায় রাখতে, এবং ক্রেতাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে এই ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক।

এ ধরনের মতবিনিময় সভা এবং নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম ভবিষ্যতে গৌরনদী উপজেলার বাজার ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে বলে স্থানীয় প্রশাসন আশাবাদী।

সম্পর্কিত সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই না পেলেও বিক্রি হচ্ছে নীলক্ষেতে

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও সরবরাহ করতে পারেনি সরকার। এবছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া...