ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি ঘের, পোনা সংকট, সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে বাগদা চিংড়ির বাজার ছোট হয়ে আসার কারণে দেশের অন্যতম রপ্তানি আয়ের খাত ‘হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি’ চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ এবং রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে অধিক উৎপাদনশীল ভেন্নামি চিংড়ি উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ হিমায়িত খ্যাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএফইএ) নেতারা জানান, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৩৬১ মিলিয়ন ডলারের, যা ২০১৪ সাল থেকে ২৮ শতাংশ কম। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম ২০১৯ সালে বাগদা চিংড়ি রপ্তানি করেছে ৬৮৭ মিলিয়ন ডলারের। তারা গত বছর ভেন্নমি জাতের চিংড়ি রপ্তানি করেছে ২৩ মিলিয়ন ডলারের। থাইল্যান্ড হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করেছে ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের। তারা ২০১৭ সালের চেয়ে ৮.৬ শতাংশ রপ্তানি বাড়িয়েছে।
রপ্তানিকারকরা জানান, গত ১০ বছরে বাগদা চিংড়ির আন্তর্জাতিক বাজার ছোট হয়ে এসেছে ভেন্নামি প্রজাতির চিংড়ির দাপটে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন ভেন্নামি চিংড়ি চাষ করছে ১৫ বছর ধরে। তারা সাফল্যও পাচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে বাগদা চিংড়ির পোনা সংকট, ঘেরগুলোতে দক্ষ লোকবল সংকট এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের অর্থ সংকটের কারণে ধীরে ধীরে কমছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি আয়। সম্প্রতি করোনাভাইরাস এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে হিমায়িত চিংড়িশিল্প ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। বর্তমানে দেশের ৮৫ শতাংশ হিমায়িত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা বন্ধ রয়েছে কাঁচামাল ও তারল্য সংকট এবং বিপুল অঙ্কের ব্যাংকঋণের কারণে। হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারক বাবুল আকতার বলেন,
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ভেন্নামি চিংড়ির যে চাহিদা তৈরি হচ্ছে তা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো পূরণ করছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ভেন্নামি চিংড়ির বাজার সাত হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক আলোচনা, বৈঠকের পরও বাংলাদেশে এখনো ভেন্নামি চাষ শুরু করা সম্ভব হয়নি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। এ ছাড়া ভেন্নামি চাষাবাদে পৃষ্ঠপোষকতাও নেই। বাংলাদেশ হিমায়িত খ্যাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএফইএ) সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশীরা যেভাবে এগিয়ে গেছে আমরা সেভাবে এগোতে পারিনি। ভেন্নমি চিংড়ি চাষের জন্য সরকার অনুমতি দিলেও টেকনিক্যাল কমিটি গত দেড় বছরেও কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি।
তিনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানান, ভেন্নামি চাষে প্রতিবেশী দেশগুলো যেভাবে এগিয়ে গেছে সেভাবে এগিয়ে যেতে। তিনি বলেন, দেশে সম্ভাবনাময় এ চিংড়ি চাষে সহায়তা ও চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এতে এই শিল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রেও ভেন্নামি চিংড়ি বড় অবদান রাখতে পারে।