স্টাফ রিপোর্টারঃবরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্টরোড বাজারে জাটকা ইলিশে সয়লাব। বাজারের মাছ বিক্রেতারা জাটকা ইলিশ হাঁকডাক দিয়েই বিক্রি করছেন। অথচ গত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাসের জন্য সারাদেশে ১০ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় যে-সব ইলিশ ডিম ছেড়েছে, সেগুলো যাতে বড় হওয়ার সুযোগ পায়।
জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার এই আট মাসে জাটকা আহরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহণ বন্ধে জেলা-উপজেলার মাছঘাট, বাজার ও জেলেপল্লিগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু এরপরও বরিশালে জাটকা ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ হচ্ছে না। বিশেষ করে বরিশাল পোর্ট্রেট মৎস্যকেন্দ্রে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব মাছ। এতে ভরা মৌসুমে ইলিশ-সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি ) বরিশাল জেলা পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে- বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌ ও সড়কপথে মাছ নিয়ে আসা হচ্ছে। এসব জাটকা ইলিশ বাজারের আড়তদার হাঁকডাক দিয়েই বিক্রি করছে। এসব মাছের দুই-তৃতীয়াংশই জাটকা বা ১০ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ। বিশেষ করে তালুকদার ফিসের প্রোপাইটার তালুকদার‚ টিপু ফিসের প্রোপাইটার টিপু‚ বাপ্পি ফিসের প্রোপাইটার আবুল কালাম প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় বাপ্পি ফিসের প্রোপাইটার আবুল কালামের সাথে। তিনি বলেন- আমরা জানি জাটকা বিক্রি অপরাধ। কি করবো বলেন, এই মাছগুলো যদি নদী থেকে ধরা না হতো তাহলে আমরা বিক্রিও করতে পারতাম না। ওই আড়তে প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ মণ জাটকা বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
আড়তদার শামীম বলেন, গত ৫/১০ দিন ধরে জাটকায় পোর্ট রোড বাজার ভরে গেছে। এখন বাজারে যে মাছ আসছে তার বেশির ভাগই নদীর। পোর্ট রোডে ১০০ মণ মাছ এলে তার মধ্যে ৯০ মণই জাটকা।
এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এসে দেখছি সব আড়তেই জাটকা। জাটকাগুলো যদি না মারা হত ভবিষ্যতে আমরা বড় ইলিশ খেতে পারতাম। আমি মনে করি ইলিশ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
জেলে সংগঠকেরা বলছেন, মৎস্য অধিদপ্তর প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ জাটকা উৎপাদন দেখিয়ে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। কিন্তু ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় না। সংকটের কারণে কয়েক বছর ধরে ইলিশের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে নেই। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা ঘেঁষা মেঘনা হলো জাটকা আহরণের মূল কেন্দ্রস্থল। এখানকার স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইলিশ ঘাটের মালিক। তাঁদের ছত্রছায়া শত শত জেলে প্রতিদিন মেঘনায় বেপরোয়াভাবে জাটকা নিধন করেন।
বরিশাল পোর্টরোড আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল সিকদার বলেন- আমরা সকল ব্যবসায়ীদের জাটকা বিক্রি করতে নিষেধ করেছি। এরপরেও যদি কেউ জাটকা বিক্রি করে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
বরিশাল পোর্টরোড আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ জহির হোসেন বলেন- জাটকা বিক্রির জন্য বাজারের ব্যবসায়ীদের নিষেধ করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, এ বছর বড় মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা মৌসুমের প্রয়োজন মেটাতে এখন বড়-ছোট সব মাছ ধরে ফেলছে। এর খারাপ প্রভাব অবশ্যই পড়বে। আমরা মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে জানিয়েছি যেন নির্ধারিত সময় নয় জাটকা আহরণ বন্ধে সারা বছরই অভিযান প্রয়োজন। শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।