বিভাগের মধ্যে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় বোরো ধানের আবাদ হয় বেশি। এ উপজেলায় চাষাবাদের জমি রয়েছে সাড়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে ৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। বিভিন্নস্থানে সেচ সংকটের পরেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে এ উপজেলায়।
তবে কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান পাকতে শুরু করেছে। শ্রমিক সংকটের কারণে সেখানকার চাষিরা ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বর্ষা মৌসুমও আসন্ন। দ্রুত ধান কাটা না হলে বিপুল পরিমাণ ধান ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাটরা এলাকার কৃষক মো. সোলায়মান (৫৫) জানান, এবার তিনি প্রায় ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ১০/১২ দিনের মধ্যে পাকা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে বিলম্ব হলে বৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
কৃষক মো. সোলায়মান আরও জানান, বিগত বছরগুলোতে এসময় ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটতে ৬ থেকে ৭ হাজার শ্রমিক আগৈলঝাড়ায় আসতেন। তবে এবার করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিক আসতে পারছেন না। তাই ধান কাটা না গেলে ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বিভাগের মধ্যে এ উপজেলায় বোরো ধানের আবাদ হয় বেশি। এ উপজেলায় চাষাবাদের জমি রয়েছে সাড়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে ৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। চাষ করা জমির মধ্যে ৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান ও ৬০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফসী) বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফলন দেখে আশা করা হচ্ছে এবার ৭৪ হাজার ৭১২ টান ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা। আর এ উপজেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৪৯ হাজার মেট্রিক টন চাল। বাম্পার ফলন হওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে বাম্পার ফলন পেলেও শ্রমিক সংকটের কারণে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এ অবস্থায় সরকার ও কৃষি বিভাগ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধান কাটতে এরই মধ্যে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট থেকে এ পর্যন্ত ৪০০ শ্রমিককে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে আরও আড়াই হাজার শ্রমিক নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই শ্রমিকরা এলে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।
কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় ধান কাটতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা তাদের নিজেদের উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হচ্ছে। ওই প্রত্যয়নপত্র সঙ্গে নিয়ে শ্রমিকরা আগৈলঝাড়ায় আসতে পারবেন। এসব শ্রমিকদের করোনা ঝুঁকি এড়িয়ে থাকার জন্য বন্ধ স্কুলগুলো ব্যবহার করার জন্য স্ব-স্ব চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকদরে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তদারকির জন্য কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবদের সরকার থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মো. নাসির উদ্দিন জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু হবে। এর আগেই সবকিছু ঠিক থাকলে কৃষকের চাহিদানুযায়ী শ্রমিক পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।