বরিশালের করোনায় আক্রান্ত সেই চিকিৎসক ঢাকায় পৌছেও বিড়ম্বনার শিকার

অবশ্যই পরুন

অবশেষে করোনা আক্রান্ত বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে ঢাকায় পৌছেছে। আজ রোববার সকালে ঢাকায় পৌছালেও এখনো তিনি কোথাও ভর্তি হতে পারেনি। এম্বুলেন্সের ভিতরে বর্তমানে অবস্থানকারী এই চিকিৎসক বিভিন্ন মাধ্যমে দুইটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। ফলে ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ চিকিৎসক মনিরুজ্জামান খান ডেপুটেশনে বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল আইসোলেশন সেন্টারে করোনা রোগীদের সেবা দিতে এসে নিজেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এক তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন। সেই সাথে তার ঢাকায় যাওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিলো নাটকীয় পরিস্থিতি।

সহকারীরা এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, করোনা দূর্যোগে সরকার দেশব্যাপী চিকিৎসকদের এই সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানালে বরিশাল বিভাগের এক মাত্র করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে রাজি হন মনিরুজ্জমান খান। গত ২৪ মার্চ তিনি ডেপুটেশনে শেবাচিমের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন বিভাগে অন্যান্য ডাক্তারের সাথে নির্ধারিত এক মাসের জন্য যোগ দেন। গত তিনদিন পূর্বে তার কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো। অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল একমাস পূর্ণ হয়। শুক্রবার ছুটির দিনে প্রশাসনিক শাখা বন্ধ থাকায় ছাড়পত্র না পাওয়ায় একদিন অপেক্ষামান থাকার মাঝে নিজে করোনা মুক্ত কিনা তা নিশ্চিত হতে স্বইচ্ছেয় স্টেট করলে সন্ধ্যায় তার রেজাল্ট পজিটিভ বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবহিত করে। পরে শেবাচিম কর্তৃপক্ষ তাকে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন।

তার একজন সহকর্মী জানান আইাসোলেশন বিভাগে তাকে যে রুম দেয়া হয়েছিল তা ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় ওই ভবনে তৃতীয় তলায় একটি রুমে একদিন থাকার পর পরিবেশগত কারণ ও উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন ও শেবাচিম পরিচালককে অবহিত করার পরই শুরু হয় নাটকীয় পরিস্থিতি। সিভিল সার্জন তাকে জানান, তিনি শেবাচিমের অধিনে থাকায় এখন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্ব তাকে সহয়তা করা। শেবাচিমের পরিচালকের দারস্থ হলে ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থা করার দায়ভার এরিয়ে যায়। এবং করোনা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক মজিরুজ্জামানের শাহিনের সহয়তা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তার সাথে দেখা সাক্ষাত বন্ধ করে দেয়।

মজিরুজ্জমান খান করোনা আক্রান্তের খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে একরাত আইসোলেশনে জরাজীর্ণ ভবনে অবস্থান করে সর্বশেষ বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রেজানুল রায়হানের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানকে ঢাকা যাওয়ার ক্ষেত্রে অসহযোগিতার বিষয়টি জানিয়ে সহয়তা চান। সেখান থেকেও কোন সুফল মেলেনি বলে ডাক্তার মজিরুজ্জামান খান দাবি করেন।

একটি সূত্র জানায়, সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেন এই সময় আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা আক্রান্ত এক চিকিৎসক দম্পতির ঢাকা থেকে বরিশালে ফিরে আসার সহয়তায় ব্যস্ত ছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে করোনা আক্রান্ত এই চিকিৎসককে তার কর্মস্থল বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রজানুল রায়হানকে সিভিল সার্জন নির্দেশ দেন।

বিস্ময়র বিষয় হলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এম্বুলেন্সের পরিচালক ঢাকায় যেতে অস্বীকার করে কর্মকর্তাদের ফোন রিসিভ থেকে বিরত থাকেন। এদিকে শেবাচিম পরিচালকের অসহযোগিতার খবরে সেখানে করোনা সেবা দিতে বিভিন্ন স্থান থেকে ডেপুটিশনে আসা চিকিৎকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান শাহিন নিজে এগিয়ে এসে ওই চিকিৎসককে ঢাকায় পৌছে দিতে একটি এম্বুলে¤েœর ব্যবস্থা করেন। তার সাথে শেবাচিমের মিডলেভেলের চিকিৎসকসহ তাদের একটি সংগঠন মনিরুজ্জামান খানের ঢাকায় যাওয়ার ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল শনিবার ২৫ এপ্রিল দুপুরে তার ঢাকায় যাওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যাত্রা স্থাগিত করা হয়। পরবর্তী সিদ্ধান্তে আজ রোববার ২৬ এপ্রিল ভোর রাতে মনিরুজ্জামান খানকে নিয়ে শেবাচিমের এম্বুলেন্সটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ৬ ঘন্টার ব্যবধানে বেলা সাড়ে ১১ টায় এম্বুলেন্সটি ঢাকায় পৌছে মুখদা জেনারেল হাসপাতাল কম্পাউডে পৌছায়।

করোনা আক্রান্ত এই চিকিৎসক মুখদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ তার নিকট সহকর্মীদের সহয়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌছানোর পর ওই হাসপাতালে ভর্তি হতে ব্যর্থ হন। বেলা সাড়ে ১২ টায় এই প্রতিবেদকের সাথে ডাক্তার মনিরুজ্জামানের ফেলফোনে কথা হলে ভর্তির বিষয়ও অসহযোগিতায় এম্বুলেন্সের ভিতরে অবস্থান করছেন বলে জানান। তার দাবি, মুখদা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তার অবস্থা অতটা গুরুত্বর নয় বিধায় এই সংকট মুহূর্তে কেবিন দেয়া সম্ভব নয়।

ঢাকায় কোন আত্মীয় পরিজন না থাকায় তিনি এম্বুলেন্সের ভিতরে অবস্থান করেই মুখদা জেনারেল হাসপাতালের পাশাপাশি কুমিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ভর্তির বিষয় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আশাবাদি এই দুইটি হাসপাতালের যেকোন একটিতে তিনি ভর্তি হবেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক তার স্ত্রী এ বিষয় যোগাযোগ করছেন।

মনিরুজ্জামান খানের সাথে কথাপোথনের সময় তাকে উদ্বিগ্ন এবং বরিশালের সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহেলার বিষয় মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানান। তার এক সহকর্মী ইঙ্গিত করেন যে, এ বিষয় মুখ খুললে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ থেকে মনিরুজ্জামান সতর্কাস্বরূপ অনেক কিছু চেপে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেনের সাথে এ প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদকের আলাপকালে বাকেরগঞ্জের করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের ঢাকায় যাওয়া নিয়ে অসহযোগিতার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেনি। তিনি জানান, জেলা ভিত্তিক করোনা পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণ এবং মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বরিশালে অবস্থানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল হালিমের সাথে দফায় দফায় বৈঠকে মনিরুজ্জামান খানের বিষয়টি নিয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে অনিচ্ছাস্বর্তেও ব্যর্থ হন। সিভিল সার্জনের ভাষায়, ডেপুটিশনের শেবাচিমের চিকিৎসা দিতে আসা মনিরুজ্জামান খানের দেখভাল করার দায়িত্ব শেবাচিম কর্তৃপক্ষের। তদুপরি বাকেরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এম্বুলেন্সটি বরাদ্দ দেয়া হলেও চালকের গাফুলতিতে কিছুটা সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়। ওই চালককে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান।

শেবাচিম পরিচালক বাকের হোসেনর সাথে করোনায় আক্রান্তে মানসিক বিপর্যস্ত চিকিৎসকের ঢাকায় যাওয়া নিয়ে নাটকীতার সর্ততা নিশ্চিতে কয়েক দফা সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি। তবে উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান শাহিন জানান, অসহযোগিতার অভিযোগটি সত্য নয়। তিনি পরিচালকের সাথে সমন্বয় করে শেবাচিমে নিজস্ব এম্বুলেন্সে তরুণ এই চিকিৎসকে ঢাকায় যাওয়ার সার্বিক ব্যবস্থা করেন। আবার স্বীকারও করেন ঢাকায় যাতায়াতে আর্থিকভাবে হাসপাতালের মিডিল লেভেলের চিকিৎসক সংগঠন ব্যয়ভার বহন করেছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

স্মার্টকার্ড বিতরণ কালে ১৫ জন মহিলার গলার স্বর্ণের চেইন চুরি

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় স্মার্টকার্ড আনতে গিয়ে ১৫ জন মহিলার স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায়...