দেশে করেনা ভাইরাসের আতঙ্ক দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দূরাত্ব বজায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা, বিনোদন দিয়ে ঘরে রাখায় মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করা ও লকডাউনের ফলে কর্মহীন মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রানান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান। করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে মানুষকে স্বাভাবিক রাখায় সহকর্মীদের নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তিনি। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনারের বিতর্কিত পরিস্থিতিতে যখন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ইমেজ সংকটে ভুগছে তখনই গৌরনদী নির্বাহী কর্মকর্তা ভিন্নরকম কৌশল অবলম্বন করে সরকারি নির্দেশনা সফল বাস্তবায়ন ও মানুষকে সেবা দিয়ে সাধারন মানুষের মন জয় করেছে । ইউএনওর মানবিক কর্মকান্ডে সন্তোশ প্রকাশ করেছে গৌরনদীর বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী, কর্মহীন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক শুরু হলে দলে দলে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করেন। এ ধারাবাহিকতায় গৌরনদীর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫ শত প্রবাসী আসেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসনের যৌথ একটি টিম দিন রাত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বুঝিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে ব্যবস্থা করেন। হোম কোয়ারেন্টিন মানতে গনসচেতনাতায় সৃষ্টি করতে প্রচারপত্র বিলি, মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারনা চালান। দেশে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এ সময় আকস্মীকভাবে গৌরনদী উপজেলার সকল হাট বাজারে চাল, ডাল, পিয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়।
স্থানীয়রা কয়েকজন জানান, তারা বিষয়টি নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌরনদীর উপজেলার বিভিণ্ন হাট বাজার কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে আহবান জানান। মতবিনিময় সভার সিদ্বান্ত অমান্য করে কতিপয় ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করায় প্রথম দিকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেন। পরবর্তিতে তা অমান্য করে দাম বৃদ্ধি করলে গৌরনদীর বাটাজোর, টরকী, মাহিলাড়া, সরিকল, গৌরনদী বন্দর, গৌরনদী বাসষ্টান্ডসহ উপজেলার ২০টি হাট বাজারে অব্যহত অভিযান পরিচালনা করে ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যবসায়ীকে ৩ লাখ টাকা জড়িমানা করে বাজার স্থিতিশীল রাখেন। টরকী বন্দরের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য রাজু আহম্মেদ হারুন, গৌরনদী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক ভোলা সাহা ও গৌরনদী বাসষ্টান্ডের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুর মহাম্মদ বলেন, ইউএনও ইসরাত জাহানের দিনরাত বাজার নিয়ন্ত্রনে কাজ করায় এলাকার বাজার দর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এই কাজটি সহজে করতে তিনি (ইউএনও) ভালবাসা ও কঠোরতা দুটি কৌশলই কাজে লাগিয়েছেন।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু তালেব, মোঃ আনিসুজ্জামান, সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মানুষকে মমতা-ভালবাসা দিয়ে সচেতন করে সাধারন মানুষকে সরকারি নির্দেশনা মানতে রাজি করিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি পরিবার ভিত্তিত কমিউনিটিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে উৎসাহ দিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনোদন সামগ্রী হিসেবে লুডু, দাবা সরবারহ করেছে। নারী কর্মীদের দিয়ে মাস্ক তৈরী করে হতদরিদ্র মানুষকে দুই হাজার মাস্ক ও স্যানিটাইজার প্রদান করেছে। কর্মহীন ভূক্তভোগীরা অনেকেই জানান, দেশে লকডাউন শুরু হলে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকসাচালকসহ খেটে খাওয়া মানুষের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহীন মানুষের মধ্যে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এ সময় নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দিন রাত বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহস্রাধিক কর্মহীন মানুষকে খুঁজে তাদের হাতে চাল, ডাল, আলুসহ খাদ্য সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করে একাধিক ব্যবসায়ী সমাজ সেবক জানান, ভাল কাজ করতে প্রয়োজন উদ্যোগ। সরকারি সাহায্য খবই কম। এ অবস্থা কর্মহীন অসংখ্য অভাবি মানুষের হাতে খাদ্য তুলে দিতে হলে উদ্যোগ দরকার। উদ্যোগ থাকলে ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে অর্থের অভাব হয় না। গৌরনদীর ইউএনও তাই করে কর্মহীন মানুষকে খাবার তুলে দিচ্ছেন। এতে তারা সহযোগীতা করছেন বলেও জানন।
ইউএনও ইসরাত জাহানের এ সকল মানবিক কর্মকান্ডকে গৌরনদী এলাকার মানুষ স্বাগত জানিয়ে অনেকই বলেন, শাসন নয়, ব্যবহার ও ভালবাসা দিলে অনেক কঠিন কাজও সহজ করানো যায়। গৌরনদীতে তাই হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও ইসরাত জাহান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে গৌরনদীর সব কিছু স্বাভাবিক রাখতে আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। তবে কাজটি করতে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। শাসন নয় ভালবাসা দিয়ে কাজগুলো করতে পেরেছি। মূলত কাজগুলো করেছে গৌরনদীর সর্বস্তরের মানুষ আমি পরামর্ম দিয়েছি মাত্র। এলাবাসির সহযোগীতার জন্য সবকিছু সহজে করা সম্ভব হয়েছে। করোনার যুদ্ধে আগামি কঠিন দিনগুলো মোকাবেলায় তিনি সকলের সহযোগীতা চান। নির্বাহী কর্মকর্তার এসব কাজ সফল করতে সহায়তা করেছেন গৌরনদীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিহা তানজিন, গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার ও পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মাহাবুবুর রহমান।