বৃদ্ধাকে পেটানো উজিরপুরের ওসি-কনস্টেবলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু এখনও বহাল তবিয়তে অভিযুক্তরা

অবশ্যই পরুন

উজিরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রবাসী নিহত

উজিরপুর প্রতিনিধিঃ বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ঢাকা -বরিশাল মহাসড়কের নতুন শিকারপুরের মুন্সিবাড়ির দরজা নামক স্থানে রাস্তা পারাপারের সময় (...

সাবেক মেয়র সাদিকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টারঃ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র ও বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন পত্র...

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’, বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা

স্টাফ রিপোর্টারঃ দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ক্রমেই ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম। সবশেষ ৬ ঘণ্টায় তা পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে...

১২ কেজি এলপিজির দাম আবার বাড়ল

স্টাফ রিপোর্টারঃ দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজিতে ২৩ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন...

থানার মধ্যে প্রকাশ্যে বিধবা বৃদ্ধাকে মারধরের অভিযোগ ওঠা বরিশালের উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ওসি শিশির কুমার পাল ও পুলিশ সদস্য জাহিদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছেন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুল হককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুল হক শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের মাধ্যমে খোঁজ খবর নেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুল হক জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’ এদিকে বুধবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পরপরই নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধা মহিলা থানা সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানের সামনে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়লে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বরিশাল জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেন। তবে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত ওসি ও কনস্টেবল বহাল তবিয়তে থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ গোটা বরিশালব্যাপী ঘটনাটি সমালোচনার ঝড় চলছে। এর আগে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পালের বিরুদ্ধে গত চারদিন আগে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কাছে নালিশ দেওয়ার অপরাধে গত বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদশর্কের (এএসআই) বিধবা স্ত্রী রাশিদা বেগম (৬২) নামের এক নারীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই নারীর অভিযোগ প্রথমে কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম একটি চায়ের দোকানের মধ্যে মারধর করে গালে সিগারেটের আগুন চেপে ধরে ঝলসে দেন এবং ওয়ালে মাথা ঠুকেন। পরে তিনি ওসি শিশির কুমার পালের কাছে অভিযোগ দিতে থানায় গেলে ওসি নিজে তার কক্ষে ওই নারীকে মারধর করে থানা থেকে বের করে দেন । মাদারীপুর সদর উপজেলার পানিচত্বর এলাকার স্বামী মৃত মোঃ মঈন উদ্দিন মাতবরের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৬২) জানান, তার স্বামী মোঃ মঈন উদ্দিন মাতবর বাংলাদেশ পুলিশের একজন সহকারী উপ-পরিদশর্কের (এএসআই) ছিলেন। ২০০৩ সালে দায়িত্ব পালনকালে হরতাল-অবরোধে পরে সন্ত্রাসীদের হাতে গুলি খেয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পরে তার দুই ছেলে মারা যায়। পরবর্তিতে ছেলে আল আমিন (২১) ও মেয়ে (১১) তাদের বাবার বাড়ি মাদারীপুরে থাকেন। রাশিদা বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ইচলাদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ইচলাদি গ্রামের আবুল কালামের ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। গত আগস্ট মাসে তার সপ্তম শ্রেনি পড়–য়া মেয়ে (১১) তার কাছে (মায়ের) উজিরপুরের ইচলাদি বাসায় বেড়াতে আসে। আগস্ট মাসের ১৩ তারিখে মেয়েকে বাসায় রেখে সে বরিশাল গেলে উজিরপুরের ইচলাদি গ্রামের মৃত রহম অলীর ছেলে বখাটে শুক্কুর আলী (৩২) নেতৃত্বে তার সহযোগী বোরহান হোসেন (৩২), আনিচুর রহমান (৩৮), কালাম হাওলাদার (৪০)সহ ৫/৬ জন বখাটে তার মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরের দিন ১৪ আগষ্ট তিনি বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়েরের জন্য লিখিত অভিযোগ জমা দিলে ওসি শিশির কুমার পাল মামলা রুজু না করে অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৯ আগষ্ট মেয়েকে উদ্ধার করে তাকে (রাশিদাকে) থানায় ডেকে নিয়ে মেয়েকে বুঝিয়ে দেন। মেয়েকে হাতে পেয়ে অপহরনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওসিকে বললে ওসি রাশিদাকে বলেন আপনার মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন মামলার দরকার নেই চলে যান। তিনি থানা থেকে বের হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাসায় আসার পথে পূর্বের অপহরনকারী পুনরায় মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায়। ওই রাতেই থানার ফিরে এসে পুনরায় অপহরনের কথা ওসিকে জানালে ওসি নতুন করে অভিযোগ করতে বললে সে নতুন করে অভিযোগ লিখে জমা দেন। ওই অভিযোগ পছন্দ না হওয়ায় ওসি তা ছিঁড়ে ফেলে আবার নুতন করে অভিযোগ লিখে দিতে বলেন। এভাবে তিনবার অভিযোগ নেন এবং ছিড়ে ফেলেন ওসি। এদিকে আগস্ট মাসের শেষের দিকে অপহরনকারী ও তাদের প্রভাবশালী স্বজনরা রাশিদা বেগমের বাসায় তালা লাগিয়ে দেন। ২/৩ দিন আগে রাশিদা বেগম বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির সাথে সাক্ষাত করে তাকে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন এবং ওসি শিশিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক রেঞ্জ ডিআইজি উজিরপুর থানার ওসি শিশিরকে রাশিদা বেগমকে আইনি সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি তার ভাড়া বাসা থেকে মালামাল উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। রাশিদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ডিআইজি স্যারের কাছে যাওয়ার ২/৩ দিন পরে বুধবার (১১ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায় ওসি আমাকে থানায় ডেকে পাঠান। সন্ধ্যায় আমি থানায় ওসির সাথে দেখা করতে রুমে গেলে তিনি বলেন, আপনি একটু পরে আসেন, আপাতত থানার বাহিরে কোন চায়ের দোকানে গিয়ে বসেন। ওসির কথামত আমি থানার সামনে বাচ্চু মিয়ার চায়ের দোকানে গিয়ে বসলে থানার কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম আমাকে ধমকের সুরে বাড়ি কোথায়? এখানে কেন এসেছি? জানতে চান। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য জাহিদ আমাকে থাপ্পর-ঘুষিসহ মারধর করে এবং গালে সিগারেটের আগুন চেপে ধরে পুড়িয়ে দেয়। ওই সময় চায়ের দোকানে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পুলিশ কিনা জানিনা তবে সিভিল পোষাকের এক লোক মহিলাকে মা বোনসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও বেদমভাবে মারধর করেছে। তারা এগিয়ে রক্ষা না করলে মহিলার অবস্থা খারাপ হতো বলেও জানান। অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ কনস্টেবল জাহিদুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি কল রিসিপ করে বলেন, আমি চা খেতে বাচ্চুর চায়ের দোকানের ভেতরে গিয়ে দেখি এক মহিলা ওসিকে স্যারকে গালাগাল করছে। আমি গালাগালের প্রতিবাদ করি। এক পর্যায়ে মহিলাকে সেখান থেকে তাড়ানোর জন্য আমি গালাগাল করি ও মারধরের ভয় দেখাই। রাশিদা বেগম আরো বলেন, জাহিদুল ইসলাম নামের পুলিশের হাতে মার খেয়ে আমি থানায় ওসি শিশির কুমার পালের রুমে যাই এবং ঘটনাটি তাকে জানাই। এতে ওসি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে আমাকে গালি দিতে দিতে বলে, ‘শালির ঝি শালি থানা থেকে বের হ, এখানে আসছো কেনো।’ এরপর শুরু করে দুই গালে থাপ্পড়। এক পর্যায়ে ওসি থাপ্পড় দিতে দিতে তার রুম থেকে আমাকে বের করে দেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, ‘ওই মহিলা একটা খারাপ লোক ও মামলাবাজ। তার স্বামী প্রসঙ্গে বলেন, তার স্বামীর হিসেবের কোন শেষ নেই। ছেলে গাড়ির হেলপার মাদারীপুরের একটি ডাকাতি মামলার আসামি। মেয়ে অপরহরন প্রসঙ্গে বলেন, তার মেয়ে অপহরনের কোন ঘটনা নাই। আমি কোন মেয়ে উদ্ধার করে দেই নাই। বুধবার সন্ধ্যায় থানায় ডেকে আনা প্রসঙ্গে বলেন, তার মালামাল উদ্ধার করে ফেরত দেয়ার জন্য থানায় ডেকে এনেছি। ডিআইজি স্যারের নির্দেশে মালামাল উদ্ধার করেছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাড়ির মালিক ঘর ভাড়া পাওনা বাবত মাল আটকে রাখে। আমি এক পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে সেই মালামাল উদ্ধার করে ফেরত দিতে থানায় ডেকেছি।’ রাশিদার ছেলে পরিবহন শ্রমিক বাবু ওরফে আল-আমিন মুঠোফোনে জানায়, তার মা’কে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ওসি ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সে আরও জানায়, ঘটনার পরে উজিরপুর থানার সামনে তার আহত মা সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়ার পরপরই ওসি শিশির সেখান থেকে তাকেসহ তার মা রাশিদাকে থানায় আটকে নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা এই মর্মে মোবাইল ফোনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়। বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম (বিপিএম) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম (পিপিএম) এর সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালোও সারা পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

উজিরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রবাসী নিহত

উজিরপুর প্রতিনিধিঃ বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ঢাকা -বরিশাল মহাসড়কের নতুন শিকারপুরের মুন্সিবাড়ির দরজা নামক স্থানে রাস্তা পারাপারের সময় (...