স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দিতে গিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় অর্চনা দাস (৩২) নামে এক গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতা গৃহবধূ গুরুত্বর অবস্থায় উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সে (গৃহবধূ) উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের পূর্ব মুন্ডুপাশা গ্রামের মৃত প্রফুল্ল বাড়ৈর মেয়ে ও এক সন্তানের জননী। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) সকালে উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার স্বজনরা জানায়, প্রায় ১২ বছর আগে অর্চনাকে পারিবারিকভাবে বরিশাল সদর উপজেলার টিয়াখালি গ্রামের যতিন গাইনের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে বিয়ের ৩ বছরের মধ্যেই স্বামী যতিন দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপর থেকে অর্চনা একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে পিত্রালয়ে বসবাস শুরু করে। এরই মধ্যে বরিশাল বিমানবন্দর উপজেলার রহমতপুর ইউপির উত্তর রহমতপুর গ্রামের রতন চন্দ্র দাস (৪৫) নামের এক বিবাহিত নি:সন্তান ব্যক্তি বিধবা অর্চনাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। এর কিছুদিন পরেই অর্চনাকে বিয়ে করে বাড়িতে নেয় নি:সন্তান রতন দাস। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে তাদের সংসারে স্বর্নালি নামের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিতা অর্চনা জানায়, ‘সম্পত্তি আত্মসাত করার জন্য আগে থেকেই তার নি:সন্তান স্বামীর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে ছিলো জা সন্ধ্যা রানী ওরফে ময়না (৩৮)। যার কারনে বিয়ের পর থেকেই স্বামী রতন ও জা প্রায় প্রতিদিনই তাকে (অর্চনা) বেধরক মারধর করতো। তাছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়ায় তার ওপর ভাশুর কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ও জা সন্ধ্যা রানী প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়। কারন এই সন্তানের জন্য তার স্বামীর সম্পত্তি থেকে ভাশুর ও তার সন্তানরা বি ত হতে পারে। এজন্য তাকে (অর্চনা) সন্তানসহ তাড়াতে প্রায়ই ভাশুর ও জা অমানবিক নির্যাতন চালাতো। সবশেষ গত বুধবার (১২ জনু) বিকেলে তার স্বামীর বাড়িতে জমির মাপ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে স্বামীর পরকীয়া প্রেমিক জা সন্ধ্যা রানীর সাথে বাকবিতন্ডা হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফিরে স্বামী রতন, জা সন্ধ্যা রানী, ভাশুর কৃষ্ণ দাস ও তার ছেলে সঞ্জীব দাস মিলে তাকে (অর্চনা) ঘন্টাব্যাপী মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়।’ গৃহবধূ অর্চনা কান্না ভেজা চোখে আরও জানায়, ‘নির্যাতনের এক পর্যায়ে মূমুর্ষ অবস্থায় সন্তানসহ রাত ১১টার দিকে তাকে স্বামী ও তার স্বজনরা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে গুরুত্বর আহতবস্থায় গৃহবধূ অর্চনা শিশু সন্তানকে নিয়ে রহমতপুর বাজার সংলগ্ন একটি বাড়ির সামনে দাড়িয়ে কাঁদতে থাকলে ওই বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাতে আশ্রয় এবং স্বজনদের খবর দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে অর্চনার স্বজনরা তাকে উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি করে।’ নির্যাতিতার স্বামীর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও ওই গৃহবধূকে তার স্বামী রতন একাধিকবার মারধর করে শরীরে সিগারেটের ছ্যাকা দিয়ে পুড়েছে। এমনকি একবার অমানুষিক নির্যাতনের পর শরীরে কেরোসিন ঢেলে পোড়াতে চেয়েছিল। তখন প্রতিবেশীরা গৃহবধূ অর্চনাকে বাঁচিয়েছে। এছাড়া স্বামী রতন তার প্রথম স্ত্রীকেও প্রায়ই মারধর ও নির্যাতন করতো। যার ওই স্ত্রী রতনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাকে (রতন) ত্যাগ করে অন্যত্র বসবাস করছে। এ ঘটনায় নির্যাতিতার ভাই সুমন বাড়ৈ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ‘বোনের নির্যাতনকারী রতনসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী বলে তারা রেহাই না পায়।’