ক’রোনাভা’ইরাসেে কর্ম হা’রিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা কুষ্টিয়ার ৪২ হাজার দুস্থ পরিবারের নামে বরাদ্দ এক হাজার ২৮১ টন স’রকারি চাল ১২ দিন ধরে পড়ে আছে ডিলারের গুদামে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরব’ন্দী জে’লার কয়েক লাখ শ্রমজীবী ও হতদরিদ্র পরিবারে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। হতদরিদ্ররা ত্রাণের আশায় দিনভর ধরনা দিচ্ছেন স’রকারি দফতরে।
জে’লার সাড়ে ৫ লাখ শ্রমজীবী ও হতদরিদ্র মানুষ মাঝে স’রকারিভাবে এ পর্যন্ত মাত্র ৪০ হাজার প্যাকেট খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছেন জে’লা প্রশাসন।
অথচ বিতরণ না করে ডিলারদের গুদামে মজুদ করে রাখা হয়েছে বিপুল পরিমাণ স’রকারি চাল। এমন সংবাদের ভিত্তিতে দুই ডিলারের গুদামে অ’ভিযান চা’লায় পুলিশ ও র্যা ব সদস্যরা। তারা দুই গুদামেই শত শত বস্তা স’রকারি চাল দেখতে পান।
ডিলাররা দাবি করেন, স’রকারি নিয়ম মতে তারা এপ্রিল মার্সের ২ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে চাল উত্তোলন করেছেন। কিন্তু তাদেরকে এখনই চাল বিতরণ করতে নিষেধ করেছেন। মৌখিকভাবে তাদেরকে এপ্রিলের ২০ তারিখের পরে চাল বিতরণ করতে বলেছেন। এসব চাল উত্তোলন করে গুদামে মজুদ করে রাখা হয়েছে।
একই কথা বলেছেন উপজে’লা নির্বাহী অফিসার, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাই অ’ভিযানে হাতেনাতে ধরেও কোনো পদক্ষেপ না নিয়েই ফিরে আসতে হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। ১১ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজে’লার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ডিলারের গুদামে কয়েকশ বস্তা স’রকারি চাল মজুদ করে রাখা হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে অ’ভিযান চা’লায় গো’য়েন্দা পুলিশের একটি দল। সেখানে ডিলারের ঘরে ১৯০ বস্তা স’রকারি চাল মজুদ দেখতে পান তারা।
ডিলার রাসেল আহমেদ বলেন, আমার কোনো দোষ নেই। ৫ এপ্রিল চাল উত্তোলন করেছি। কিন্তু অনুমতি না দিলে কীভাবে বিতরণ করব।
অ’ভিযানের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান উপজে’লা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস ও উপজে’লা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিনসহ খাদ্য বিভাগের লোকজন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স’রকারি কর্মকর্তারা গো’য়েন্দা পুলিশ সদস্যদের অবগত করেন ডিলারের কোনো অ’পরাধ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আপাতত ফেয়ার প্রাইসের চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ২০ তারিখের পরে এসব চাল বিতরণ করা হবে। এসময় উপজে’লা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিমাণ স’রকারি সহায়তাসহ ওএমএসের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি আরও খা’রাপ হতে পারে। এমন চিন্তা করে জে’লা প্রশাসক কিছুদিন পরে এই চাল বিতরণ করতে বলেছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব বিশেষ প্রকল্প ফেয়ার প্রাইসের ১০ টাকা কেজির চাল পাবেন ইউনিয়নভিত্তিক কার্ডধারী দুস্থ পরিবার। খাদ্যবান্ধব এই কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীরা বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা কিংবা ওএমএসসহ কোনো সুবিধা নিতে পারবেন না। কুষ্টিয়ার ৬ উপজে’লায় বর্তমানে কার্ডধারী দুস্থ পরিবারের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭২৩ জন।
একই ঘটনা ঘটেছে ১৩ এপ্রিল রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজে’লার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিলনের ভাই ইউনিয়নের ফেয়ার প্রাইস চালের ডিলার কামাল মণ্ডলের গুদামে বিপুল মজুদ করে রেখেছে। খবর পেয়ে রাতেই অ’ভিযান চা’লায় কুষ্টিয়া র্যা ব-১২ এর সদস্যরা। সেখানে যেয়ে র্যা ব সদস্যরা চারশত বস্তা স’রকারি চাল মজুদ অবস্থায় দেখতে পান।
স্থানীয় ডিলার কামাল মণ্ডল জানান, ২ এপ্রিল তিনি চাল উত্তোলন করে গুদামে নিয়ে আসেন। কিন্তু জে’লা থেকে তাকে বিতরণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। তাই ১২ দিন ধরে তার গুদামে এই চাল পড়ে আছে।
জে’লা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোয়ার হোসেন জানান, এতে খাদ্য বিভাগের কিছুই করার নেই। জে’লার কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তে বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে এখন বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জে’লা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার ৬ উপজে’লায় ১০৮ জন ডিলারের মাধ্যমে ইউনিয়নভিত্তিক কার্ডধারী এসব দুস্থ পরিবারের মাঝে এসব চাল বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজে’লায় ৯ হাজার ১২৫ কার্ডধারী দুস্থ পরিবারে মাঝে চাল বিতরণ করেন ২৪ জন ডিলার, কুমারখালী উপজে’লায় ১৪ হাজার ৩৪২ পরিবারে বিতরণ করেন ৩৩জন ডিলার। খোকসা উপজে’লায় ৪ হাজার ২৩৫ পরিবারের মাঝে বিতরণ করেন ৯ জন ডিলার, ভেড়ামা’রা উপজে’লায় ৮ হাজার ১৩৯ পরিবারে ১৫জন ডিলার, মিরপুর উপজে’লায় ৪ হাজার ১১০ পরিবারে বিতরণ করেন ১৩ নজন ডিলার এবং দৌলতপুর উপজে’লায় ২ হাজার ৭০২ জন কার্ডধারী দুস্থ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করেন ১৪ জন ডিলার।
প্রতিবছর মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বছরে ৫ বার ১০ টাকা কেজিতে প্রতি পরিবারে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়।
স’রকারি সিদ্ধান্ত মতে, প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে এসব চাল ডিলারদের উত্তোলন করে সপ্তাহের রোববার মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার তিনদিন কার্ডধারী উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
কুষ্টিয়া জে’লা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, জে’লার সব ডিলারদের দুই-তিনদিনের মধ্যে চাল বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো ডিলার দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল বিতরণ না করলে তার ক’ঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাল নিয়ে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।