নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি: নেছারাবাদে চোরাই ফোন কিনে প্রতারণার ফাদে পড়ে নিজের অজান্তে আইনি প্যাচে পড়ছে সাধারন মানুষ। ঝামেলা এড়াতে ফোন ফেরৎ দেয়াসহ দোকানির নাম ঠিকানা, ক্রয়কৃত রিসিভ দিয়েও পারছেনা আইনি ঝামেলা এড়াতে।
আইনি প্যাচ থেকে নিস্তার পেতে ভুক্তভোগীরা পুলিশকে উৎকোচ দেয়া সহ জেল জরিমানার ভয়ে জমানো টাকায় কেনা শখের ফোনের মায়া পর্যন্ত ছেড়ে দিচ্ছেন তারা। তারা বলছেন কম দামে ভাল মানের ফোন কেনার জন্য দোকানে গেলে দোকানিরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাদেরকে ভুলবাল বুজিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছেন চোরাই ফোন।
আর এসব ফোন কিনেই বিপদে পড়ছেন তারা। পুলিশ বলছেন সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কে জিজ্ঞাসা কোন কোন ব্যাক্তিকে থানায় ডাকা হয়। তবে কারো কাছ থেকে কোন উৎকোচ নেয়া হয়না। সম্প্রতি দিন পনের পূর্বে vibo y21 নামে একটি চোরাই ফোন কিনে ঝামেলায় পড়ে নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ী গ্রামের একটি হতদরিদ্র পরিবারের গ্রামের দশম শ্রেণি পড়ুয়া দ্বিপ বড়াল নামে একজন ছাত্র।
ছেলেটি বলেছে, সে খুবই গরীব ঘরের ছেলে। তার পিতার নাম স্বপন বড়াল। দ্বিপ লেখা পড়ার ফাকে ফাকে মাঠে ঘাটে কৃষানের কাজ করত। এমনকি কাজ না থাকলে তখন সে ওয়াইফাই লাইনের রাস্তায় কাজ করে একটি ফোন কেনার জন্য কিছু টাকা সঞ্চয় করে।
আনুমানিক পনের দিন পূর্বে ছেলেটি উপজেলার মিয়ারহাট বাজারে ফোন প্লাস নামে একটি দোকানে গিয়ে নতুন ফোন দেখতে চায়। তখন দোকানি তাকে কম দামে একটি ভাল ফোনের কথা বলে আট হাজার টাকায় ধরিয়ে দেন vibo y21 নামে একটি ফোন। ফোন নিয়ে সে বাড়ীতে আসার পর কিছু দিন ভালই ছিল তার মন।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নেছারাবাদ থানার পুলিশ পরিচয়ে এক লোক তাকে ছেলেটিকে ফোন করে জলাবাড়ী গ্রামের একটি দোকানের সামনে আসতে বলে। ছেলেটি আসামাত্র পুলিশ তার হাতের ফোনটি কেড়ে নিয়ে বলে এই ফোন তুমি কোথায় পাইছো।
এটা একটি চোরাই ফোন। তখন ছেলেটি পুলিশকে বিক্রেতার নাম ঠিকানা দেয়া সহ দোকানির রিসিভ এমনকি দোকানির সাথে ফোনে কথা পর্যন্ত বলিয়ে দেয়। তারপরও পুলিশ তাকে থানায় তুলে নিতে চাচ্ছিল। তখন এলাকার শুভাকাঙ্খি কিছু ব্যাক্তিরা পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে ছেলেটিকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন।
তারপর সন্ধ্যার পরে দ্বিপ বড়ালকে স্ব-শরীরে থানায় হাজির হওয়ার জন্য মর্মে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ছেলেটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানার সামনে ঘুরছিল পুলিশের সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে। ফোন প্লাস দোকানে গিয়ে চোরাই ফোনের ব্যাপারে জানতে চাইলে, দোকানের মালিক শাওন মাহামুদ বলেন, পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেলে ফোনের ব্যাপারে জানতে দোকানে এসেছিল।
আমি যার কাছ থেকে ফোন কিনেছিলাম সেই লোককে পুলিশের সামনে হাজির করেছি। পুলিশ তাকে নিয়ে গেছে। নাম প্রকাশ করার না শর্তে উপজেলার আরামকাঠি গ্রামের এক স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী বলেন কিছু দিন পূর্বে, পনের হাজার টাকায় vivo মোবাইল ফোন কিনে ঝামেলায় পড়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, উপজেলার স্বরূপকাঠি বাজারের সাউদিয়া নামে একটি ইলেকট্রিনিক্স দোকান থেকে ওই ফোনটি কিনেছেন। অবশ্য ফোনটির বাজার মূল্য পচিশ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বাজারে গিয়ে দোকানিকে একটি নতুন ফোন দেখানোর জন্য বলি। দোকানি আমাকে কম দামে ভাল ব্রান্ডের একটি ফোনের অফার করে।
আমি তার কথায় রাজি হলে সে আমাকে ফোনটি দেখায়। ফোন কিনে বাসায় আসলে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থানার পুলিশ পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলে ম্যাডাম আপনি যে ফোনটি ক্রয় করেছেন সে ফোনের আসল মালিক আপনি নন। ফোনটি আসলে চোরাই ফোন। এরপর ঝামেলা এড়াতে আমাকে ফোনের মায়া ছেড়ে দিতে হয়েছে।