More

    বরিশালে পাল্টা আন্দোলনে চিকিৎসক নার্সরা

    অবশ্যই পরুন

    জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে বরিশালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের কর্মচারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল চত্বরে পূর্বঘোষিত গণঅনশন শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন।

    এর আগে বুধবার বিকেলে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বললেও আরেক অংশ এক মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।

    আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন রনি হামলার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মো. আবু জাফরকে দায়ী করেছেন। বিকেলে সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বুধবার মহাপরিচালক আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে উস্কানি দেন। তাঁর বক্তব্যে আশকারা পেয়ে হাসপাতালের কর্মচারীরা মব সৃষ্টি করে হামলা চালিয়েছে। কোনো হামলা আমাদের আন্দোলন দমাতে পারবে না।’

    মহিউদ্দিন রনি জানান, তাদের তিন শিক্ষার্থীর অনশন অব্যাহত রয়েছে। তবে কোথায় অনশন করছেন, নতুন কর্মসূচি কী– জানাননি তিনি। শুধু আগের তিন দফার সঙ্গে হামলাকারীদের বিচারের দাবি যুক্ত করেছেন।

    আন্দোলনে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিলুপ্ত জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যের ডিজি বরিশালে এসে দাবি পূরণে সময় চেয়েছেন। তাঁর কথায় আশ্বস্ত হয়ে আমরা আন্দোলন এক মাস স্থগিত করেছি। এখনও যারা আন্দোলনে আছেন, তাদের হয়তো ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের কারণেই শিক্ষার্থীরা মারধরের শিকার হয়েছেন।’

    স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে গত ২৭ জুলাই বরিশালে ‘ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে সমাবেশ ও মিছিল হলেও গত ৭ আগস্ট থেকে তারা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক ছয়-সাত ঘণ্টা অবরোধ করে আসছেন। এতে বরিশাল বিভাগের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের বেশির ভাগ জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধে দুর্ভোগ তৈরি হয়।

    বুধবার পরিবহন শ্রমিকরা হামলা চালালে আন্দোলনকারীরা সড়কের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল চত্বরে গণঅনশনের ঘোষণা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন চিকিৎসক-নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা গতকাল বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনের নামে অরাজকতার প্রতিবাদে মানববন্ধন আয়োজন করেন। কর্মসূচি শুরুর আগেই মেডিসিন ওয়ার্ডে কয়েক কর্মচারীকে শিক্ষার্থীরা মারধর করছেন– এমন খবরে উত্তেজনা দেখা দেয়।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সহকর্মীদের মারধরের খবরে কর্মচারীরা হাসপাতাল ভবনের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন। বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসেবা। অবস্থা বেগতিক দেখে অনশনে থাকা তিনজনসহ আন্দোলনকারীরা দ্রুত হাসপাতাল এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে বেদম মারধর করা হয়।

    টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন, তারা ছাত্র নন; চাঁদাবাজ। তাদের উস্কানিতে রোগীর স্বজনও আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যই আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।’ হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী সেলিনা আক্তার পরনের ছেঁড়া ওড়না দেখিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মেডিসিন ওয়ার্ডে ঢুকে কর্মচারীদের মারধর করতে থাকেন। সহকর্মীদের উদ্ধারে গেলে আমাকেও মারধর করেন।’

    হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দিনে গড়ে ২ হাজার ২৮৮ রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ১ হাজার ৫৬৯ জন। কর্মচারীদের আন্দোলনে এসব রোগী ও তাদের স্বজন দুর্ভোগে পড়েন।

    সরেজমিন বহির্বিভাগে চিকিৎসক থাকলেও কোনো কর্মচারী পাওয়া যায়নি। অস্ত্রোপচার কক্ষে কর্মচারী না থাকায় আগের রোগীদের নতুন করে তারিখ দিতে দেখা যায়। হাফিজুল ইসলাম জানান, তাঁর ছেলে সার্জারি-২ বিভাগে ভর্তি। বৃহস্পতিবার পায়ে অস্ত্রোপচারের নির্ধারিত দিন ছিল। আন্দোলনের কারণে অস্ত্রোপচার না করে রোববার নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে।

    হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীম বলেন, ‘হঠাৎ কর্মচারীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা বিঘ্নিত হয়। তবে দ্রুত চিকিৎসক-নার্সরা পরিস্থিতি সামলে নেন।’

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশালে প্রসূতি নারীর মৃত্যু: চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ স্বামীর

    বরিশাল নগরীর আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত নারীর নাম তানজিলা আক্তার, তিনি...