পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ খাল, বিল ও জলাশয় পানিশূন্য হয়ে পড়ায় বাজারগুলোতে এখন আর আগের মতো মিলছে না কৈ, শিং, মাগুর, টাকি, পুঁটি কিংবা দেশি চিংড়ি। ফলে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নির্ভর করতে হচ্ছে নোনা পানির সামুদ্রিক মাছের ওপর। উপজেলা শহরের পিরতলা বাজার, নতুনবাজার, রাজাখালী, তালতলী, বোর্ড অফিস এলাকা, আঙ্গারিয়া বন্দর, মুরাদিয়ার কলবাড়ি ও তালুকদার হাট ঘুরে দেখা গেছে— অধিকাংশ বাজারেই দেশীয় মাছের আড়ত প্রায় ফাঁকা।
কোথাও অল্প পরিমাণ দেশি মাছ মিললেও দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ওয়াপদা বেড়িবাঁধ দ্বারা বেষ্টিত থাকায় দুমকির অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোতে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে খাল-বিল দখল ও ভরাট, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্বল্পতা দেশীয় মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। ফলে স্থানীয় জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ক্রমেই কমে যাচ্ছে। পিরতলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ বলেন, একসময় স্থানীয় খাল-বিল থেকেই প্রচুর কৈ, শিং, মাগুর পাওয়া যেত।
এখন সেগুলো প্রায় নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে কালাইয়া, দশমিনা, গলাচিপা ও মহিপুর এলাকা থেকে সামুদ্রিক মাছ এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। দূর থেকে আনতে হওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, ফলে দামও বেশি পড়ছে। ক্রেতারাও দেশীয় মাছের অভাবে হতাশা প্রকাশ করেছেন। গৃহিণী রেবেকা বেগম বলেন, দেশি মাছ স্বাদ ও পুষ্টিতে ভালো। কিন্তু বাজারে পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে সামুদ্রিক মাছ কিনতে হচ্ছে, যা সবার পছন্দের নয়। স্থানীয় মৎস্য সংশ্লিষ্টদের মতে, খাল-বিল সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে দেশীয় মাছের সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
তারা অবৈধ ভরাট বন্ধ, খাল পুনঃখনন, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় জলাশয়ে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করার দাবি জানান। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশীয় মাছ রক্ষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও জলাশয় ব্যবস্থাপনা জোরদারের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। তবে দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ না নিলে দুমকিতে দেশীয় মাছের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশীয় মাছের এই সংকট শুধু খাদ্যাভ্যাসেই নয়, স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
