চলতি বছরের ১১ মার্চ জরায়ু অপারেশনের (অস্ত্রোপচার) জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আনোয়ারা বেগম (৬৫)। কিন্তু অপারেশনের তালিকায় নাম না থাকায় হাসপাতলেই শুয়ে আছেন তিনি। সন্তানদের বাড়িতে রেখে জরায়ুর যন্ত্রণা নিয়ে গত ১১ মার্চ শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আনোয়ারা বেগম। ১৬ মার্চ অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল তাঁর। ভর্তির পর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো অস্ত্রোপচারের খবর নেই তাঁর। তাঁর কারণ হিসেবে হাসপাতালের জরুরী রোগী নন বলে জেনেছেন তিনি।
শুধু আনোয়ারা বেগমই নন শেবাচিম হাসপাতালের ডাঃ খুরশীদ জাহানের খামখেয়ালীতে গত কয়েক মাস ধরে দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে অস্ত্রোপচার সেবা নিতে আসা রোগীরা। উপায় না থাকায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কেউ কেউ এক মাস ধরে হাসপাতালে পড়ে থাকলেও অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলেও গেছেন। অভিযোগ রয়েছে করোনা মহামারীর অযুহাতে প্রায় সময়ই হাসপাতালে আসে না ডাঃ খুরশীদ জাহান।
আনোয়ারা বেগমের ছেলে রাশেদুল ইসলাম জানান, তাঁর মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু ১১ মার্চ থেকেই বন্ধ রয়েছে গাইনী রোগীদের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম। কিন্তু বিপাকে পড়ে ও সামর্থ না থাকায় অন্য কোথাও গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তবে নিয়মিতভাবেই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১১টি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা বাউফল উপজেলার আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘১১ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। জরায়ু রোগে ভুগতেছি। সেই রোগের অস্ত্রোপচার করার জন্য এসেছি। কিন্তু অস্ত্রোপচার না করায় এখানেই পড়ে আছি। চিকিৎসক নাকি ব্যস্ত আছেন। আমরা গরিব মানুষ, টাকাপয়সাও নেই যে অন্য কোথাও গিয়ে অস্ত্রোপচার করব।’
তবে বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাতে কথা বলতে গেলে হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের ডাঃ খুরশীদ জাহানকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডাঃ খুরশীদ জাহান বলেন, “আমি কলেজে লেকচার দিচ্ছি। কিন্তু কথা বলার সময় তার মুঠোফোন থেকে রাস্তায় গাড়ী চালানোর শব্দ শোনা যাচ্ছিল। অন্যদিকে ১ মাসেও আনোয়ারা বেগমের অস্ত্রোপচার হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডাঃ খুরশীদ জাহান বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি।” কিন্তু সংবাদকর্মীদের কাছে ভোগান্তির বিষয়টি জানানোর কারনে পরের দিনই অর্থ্যাৎ ডা. খুরশীদ জাহান আনোয়ারা বেগমকে হাসপাতাল থেকে তার বাড়ী চলে যেতে বলেন। এমনকি আনোয়ারা বেগম ও তাঁর ছেলের সঙ্গে খারাপ আচরণও করেন ডা. খুরশীদ জাহান। পরে ডাক্তারের এমন আচরণে সেচ্ছায় নাম কেটে হাসপাতাল থেকে চলে যায় আনোয়ারা বেগম।
তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ কেন করেছেন সে জন্য ডা. খুরশীদ জাহানকে জিজ্ঞাসা করা হবে।’