More

    আলোকবর্তিকা হয়ে চিরস্মরণীয় চরফ্যাসনের গোলাপফুল নজরুল

    অবশ্যই পরুন

    ১৯৯২সালের ১৭সেপ্টেম্বর এক বর্ণাঢ্য ও সার্থক জীবনের যবনিকা টেনেছিলেন দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশনের গোলাপফুল খ্যাত সাবেক সাংসদ মরহুম অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। একসময়ের অবহেলিত এই চরাঞ্চলকে আলোকিত করতে আলোকবর্তিকা হয়ে তার সকল মহতী কার্যক্রম এবং বহুগুনে গুণান্বিত ও বিচিত্র প্রতিভার সাফল্যগাঁথার এক উজ্জল বর্ণাঢ্য জীবনের জন্য এই জনপদের সর্বস্তরের মানুষের কাছে থাকবেন তিনি চিরস্মরনীয়।
    অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, যিনি ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্হানীয়ভাবে সংগঠক হিসাবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একজন প্রকৃত  শিক্ষক ছিলেন তিনি। তার শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছে  উপকূলের অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী। দুই দুইবার স্থানীয় সাংসদ নির্বাচিত হয়ে  তিনি নিরলস ভাবে কাজ করেছিলেন অবহেলিত  চরাঞ্চলের অবকাঠামো  উন্নয়ন ও অসহায় মানুষের  মুখে হাসি ফুটাতে। তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক, সংবাদ পত্র ও সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। যার হৃদয়ে ছিলো সমগ্র উপকূল। যিনি উপকূলীয় মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে বেঁচে থাকার গল্প এবং তাদের সৃষ্ট সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে সকলের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেন চরফ্যাসন থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদ পত্র সাপ্তাহিক উপকূল’। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। স্বপ্ন দেখতেন অবহেলিত এ চরাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের এবং দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের স্বয়ং সম্পুর্নভাবে জীবনধারার। তাইতো মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থতার সময় স্থানীয় মানুষের সামনে তিনি তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের করতে অছিয়ত করেছিলেন তারই জ্যেষ্ঠপুত্র আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব কে। যিনি বর্তমান ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক  উপমন্ত্রী। তিনি তার বাবার স্বপ্ন পুরনে কঠোর পরিশ্রমের ফলে রেকর্ডকারী উন্নয়নের মাধ্যমে (চরফ্যাসন-মনপুরা) এ চরাঞ্চলের  অবকাঠামো ব্যাপক উন্নয়ন করে  আধুনিকতার রুপ দিয়েছেন। যা ইতিমধ্যে সমগ্র বাংলাদেশে একটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে প্রশংসিত হয়েছে।
    এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চরফ্যাসন সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ দুলাল ত মরহুম অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম কে নিয়ে লেখা “মরনেরে ঢেকে রাখি স্মরণের অবরনে” নামক তার একটি কাব্যে উল্লেখ করেছিলেন..
    “পিতার পরশে দিয়েছে পুত্র
    সৌহার্দপূর্ণ রাজনীতি,
    অনেক অসাধ্য করেছে সাধন
    শত বছরের উন্নতি।”
    অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্যারের আলোকিত  বর্ণাঢ্য জীবন।।
    শিক্ষা জীবনঃ ১৯৫৪সালের লর্ডহার্ডিঞ্জ মাদ্রাসা থেকে নজরুল ইসলাম ৫ম শ্রেণি পাশ করেন। তিনি লর্ডহার্ডিঞ্জ হাই স্কুলে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯৫৯সালে বরিশালের কাশিমপুর হাই স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এস.এস.সি, ১৯৬১সালে বরিশাল বি.এম কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচ.এসসি এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএ পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন।
    কর্মময়জীবনঃ ১৯৬৪সালে তিনি চরফ্যাসনের দুলারহাট হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৭সালে তিনি চরফ্যাসন টি,বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৮সালের ১আগষ্ট চরফ্যাসন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম চরফ্যাসন কলেজের ভারপ্রাপ্ত  অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পদে নিয়োগ পান। কিন্তু চরফ্যাসনের মানুষের দাবীর ও ভালোবাসার টানে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে ১অক্টোবর ১৯৬৯ থেকে চরফ্যাসন কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৭১সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে স্হানীয়ভাবে সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
    রাজনৈতিক জীবনঃ তিনি ১৯৭৯ সালে বাকেরগঞ্জ-৩ (চরফ্যাসন -লালমোহনের কিছু,অংশ নিয়ে গঠিত) আসন এবং ১৯৯১সালে দ্বিতীয়বারের মতো ভোলা-৪ (চরফ্যাসন-মনপুরা) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং বিমান ও পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
    এই মনীষী ১৯৯২সালের ১৭সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী,তিন ছেলে এবং এক কন্যাসহ বিপুল সংখ্যক গুণগ্রাহী রেখে যান।
    আজ ১৭সেপ্টেম্বর এই মহান নেতার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মরহুম এই নেতার কর্ম, আদর্শ ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্থানীয় আওয়ামীলীগসহ   বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বেচ্ছাসেবী ও পেশাজীবি সংগঠন  ইতিমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করেছে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত...