কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত এখন পলিথিন আর প্লাস্টিকে সয়লাব। যত্রতত্র এই প্লাস্টিকে শুধু সৈকতের পরিবেশই নষ্ট হচ্ছে না সঙ্গে সমুদ্র এলাকার জীববৈচিত্র্যও পড়ছে হুমকির মুখে। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নিলয় তালুকদার যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য দেখে আক্ষেপ করে বলেন, কুয়াকাটা এত সুন্দর একটি জায়গা। সবকিছুই বেশ সুন্দর, তবে কুয়াকাটা সৈকতে অনেক প্লাস্টিক বর্জ্য যেগুলো আমাদের খুব বিরক্ত করে। অবশ্যই এগুলো পরিষ্কার না রাখলে কুয়াকাটায় আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারছি না।
ঢাকা থেকে আসা নীলাঞ্জনা রায় নামে অপর এক পর্যটক বলেন, আমরা শহর থেকে এখানে একটু সুন্দর পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সৈকতের খোঁজে এখানে আসি। কিন্তু এসে দেখি বিপরীত চিত্র। এত সুন্দর একটি জায়গায় এই সমস্যাগুলোর জন্য সবাইকে আরও সচেতন হওয়া দরকার।
কুয়াকাটা সৈকতে স্ট্রিড ফুডের ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। তাদের ব্যবহৃত পলিথিন, খালি বোতলের খোসা, ডাবের খোসা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে যত্রতত্র ছুড়ে ফেলা এবং স্থানীয়সহ পর্যটকদের অবহেলায় এই দশা সৈকতের এমনটাই মনে করেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার।
তিনি আরও বলেন, সৈকত পরিষ্কার রাখার জন্য আমরা সৈকতে থাকা প্রায় ১০-১২টি পেশার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের মাধ্যমে ট্রেনিং করিয়েছি এবং গতকাল ময়লা রাখার প্রায় দুইশত ডাস্টবিন বিভিন্ন পয়েন্টে দিয়েছি টোয়াকের উদ্যোগে। কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি যদি আরও একটু খেয়াল করে সৈকতের দিকে তাহলে সৈকত পরিষ্কার রাখা সম্ভব।
টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, সৈকতে যেন ময়লা না ফেলা হয় সেজন্য আমরা বার-বার মাইকিং করে সতর্ক করি। সেই সঙ্গে সপ্তাহে একবার আমাদের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান করা হয়। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যদি সবসময় লোক নিয়োজিত করে থাকে পরিষ্কারের জন্য তাহলে এটার সমাধান হবে।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৌদ্ধ জানান, কুয়াকাটা সৈকতে যত্রতত্র ময়লাগুলোকে পরিষ্কার এবং সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা শিগগির ব্যবস্থা নেব।
কলাপাড়া উপজেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় বছরে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। আর কুয়াকাটা সৈকত বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠায় অতিরিক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্য জমায় সমুদ্রে থাকা প্রাণী হুমকিতে রয়েছে। যে কারণে প্রতি বছর কয়েকশো তিমি, ডলফিন, কচ্ছপ, রাজ কাকড়াসহ নানা জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়। এগুলোকে বন্ধ না করা গেলে আমরা আরও হুমকিতে পরতে পারি।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সৈকত পরিষ্কার রাখার জন্য পৌরসভা ও আমি সার্বিকভাবে কাজ করছি। আমাদের কয়েকটি টিম সকাল-বিকেল ময়লা পরিষ্কার করে কিন্তু কিছু অসচেতন পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কারণে এ সমস্যাটা মাঝে মাঝে হয়।
বরিশাল নিউজ/স্ব/খ