আজকের বাংলাদেশের উন্নতি ও টেকসই যে পরিবেশে, তা মূলত গবেষণার ফল। গবেষণাই পারে সমাজ, দেশ এবং রাষ্ট্রকে সামগ্রিকভাবে উন্নত করে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে। গবেষণার মাধ্যমে জটিল কোনো সমস্যার সমাধান বের করা এবং নতুন নতুন চিন্তা, আবিষ্কার, উদ্ভাবন দ্বারা আমাদের জীবনকে আধুনিক ও সহজতর করা।
যাই হোক, গবেষণার চর্চার মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করার লক্ষ্যে এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর হাত ধরে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ তৈরি হয়। ছাত্র-শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রয়াসে গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং তা বিরাজমান সমাজ পরিবর্তন ও বিনির্মাণে অবদান রাখাই ছিল এ সংসদের প্রধান কাজ।
এরপর পর্যায়ক্রমে ঢাবি, রাবি, জবি, খুবি, কুবি, জাককাইবি, শাবিপ্রবি, ইবি, নেবিপ্রবিসহ দেশের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই রিসার্চ সংসদ আছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটদের জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সংসদের উদ্বোধন হয়ে গেল। মূলত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য গবেষণা সংসদগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সংগঠনটি ‘প্রমোটিং আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ কালচার : অ্যা নিউ এরা অব বরিশাল ইউনিভার্সিটি’- শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সংসদের মডারেটরবৃন্দ, উপদেষ্টা এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ গবেষণা সংসদের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য এবং গবেষণা সংসদের নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. খোরশেদ আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম সাদেক। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সেমিনারে বলেন, আমরা অনেকে কিছু করছি।
কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আমরা গবেষণার মানসিকতা তৈরি করতে পারছি কিনা! এই জায়গায় আমাদের গবেষণা সংসদগুলো কাজটি করে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে আমাদের তরুণরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই কাজটি শুরু করেছিল। যা এরই মধ্যে ১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে এবং একযোগে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, গবেষণাকে ভালোবাসাটা মুখ্য। গবেষণা সংসদের শিক্ষার্থীরা ভালোবেসেই কাজগুলো করে যাচ্ছে। তাদের যে আইডিয়া আছে সে আইডিয়াগুলো পরিচর্যা করছে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করছে। এটি দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, এ সময় তিনি তরুণ গবেষকদের এথিকস ঠিক রাখার কথাও বলেন। যেমন কারোর গবেষণার ক্রেডিট দিতে যেন ভুল না করি আমরা। প্রত্যেকের মস্তিষ্কের চিন্তা তার নিজের সম্পদ। তাই এর ক্রেডিট দিতেই হবে। এটা গবেষকের মূল বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়াও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘তিনি সব সময় শিক্ষার্থীদের গবেষণা সংসদ পাশে আছেন।’
গবেষণা মূলত মানব সমাজের উন্নয়নের জন্য করা হয়। দেশ ও বিশ্বের শান্তির জন্য গবেষণা করা হয়। গবেষণার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা হলো চিন্তার নায়ক। চিন্তা করতে হবে এবং নতুন নতুন জ্ঞান তৈরি করতে হবে। তাহলে শিক্ষার উদ্দেশ্য অর্জন হবে এবং দেশ ও সমাজের অগ্রগতি হবে। এই জায়গাটি নিয়ে গবেষণা সংসদের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। আর শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ এবং তাদের কার্যক্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের সম্পদ কম কিন্তু এই সীমিত সম্পদের হীনমন্যতায় না ভুগে বরং সকল সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে তরুণেরা ভালো কাজ করে যাবে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন উপহার দেবে গবেষণার মাধ্যমে-এটাই হলো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংসদের মূল লক্ষ্য।
বরিশাল নিউজ /এসএলটি