অনিয়মিত অভিবাসী ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সদস্যদেশগুলোর নেতাদের কাছে গত বৃহস্পতিবার লেখা এক চিঠিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এ কথা জানান।
উরসুলা বলেন, তিনি চান অভিবাসীদের ‘ফিরে যাওয়া নিরাপদ, এমন দেশগুলোর’ একটি তালিকা উপস্থাপন করুক ইইউ; একই সঙ্গে ভূমধ্যসাগর ও পশ্চিম বলকানের প্রবেশপথগুলোর সীমান্তনিরাপত্তা যাতে জোরদার করা হয়।
অভিবাসীবিষয়ক সংবাদ ও তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট ইনফো মাইগ্রেন্টসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ইইউর বর্তমান সভাপতি সুইডেন বৈঠকে সভাপতিত্ব করে।
সুইডেনের অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ড বলেন, ইইউর মন্ত্রীরা অনিয়মিত অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করছে- জোটের বাইরে থাকা এমন দেশগুলোকে সতর্ক করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। এসব দেশ কঠিন ভিসা বিধিনিষেধের ঝুঁকিতে থাকবে।
স্টেনারগার্ড আরো বলেন, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হওয়ার পর নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়াতে ২০২০ সাল থেকে যে প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, তা ‘পুরোপুরি ব্যবহার করা উচিত’ বলে মন্ত্রীরা একমত হয়েছেন।
জোটের অভিবাসন নীতি নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার স্টকহোমে ইইউর ২৭ জন অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী বৈঠক মিলত হন। যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেননি, সেসব অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া কীভাবে দ্রুততর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সদস্যদেশগুলোর নেতাদের কাছে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কমিশনের প্রধান উরসুলা। এতে তিনি বলেন, সদস্যদেশগুলো ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে একটি পাইলট প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারে, যাতে যোগ্য অভিবাসীদের যাচাই-বাছাই এবং আশ্রয়প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো যায়। এতে যোগ্যতা অর্জনে যাঁরা ব্যর্থ হবেন, তাঁদের ‘অনতিবিলম্বে ফেরত’ পাঠানোর সুযোগ তৈরি হবে।
উরসুলা আরও বলেন, বাংলাদেশ, মিসর, মরক্কো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে অভিবাসন চুক্তি করতে চায় ইইউ। তিনি চান, অভিবাসীদের ‘ফিরে যাওয়া নিরাপদ- এমন দেশগুলোর’ একটি তালিকা উপস্থাপন করুক ব্রাসেলস। একই সঙ্গে ইউরোপে পৌঁছাতে ভূমধ্যসাগর ও পশ্চিম বলকানের যেসব পথ অভিবাসীরা ব্যবহার করে থাকেন, সেসব সীমান্তের নিরাপত্তা যাতে জোরদার করা হয়।
এদিকে অভিবাসীদের অনিয়মিত আগমন ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় ইইউর সমালোচনা করেছেন স্বরাষ্ট্রবিষয়ক কমিশনার ইলভা জোহানসন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফেরত পাঠানোর হার একেবারেই নগণ্য। আমি মনে করি, এই জায়গায় আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারি।’
ইলভা জোর দিয়ে বলেন, অনেক দেশ ‘ব্যাপক চাপের’ মধ্যে রয়েছে। গত বছর রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রায় ১০ লাখ আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে।
ইইউর সীমান্তবিষয়ক সংস্থা ফ্রনটেক্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে তিন লাখ ৩০ হাজার অননুমোদিত অভিবাসী এসেছেন। এই সংখ্যা ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ। রাশিয়ার হামলার মুখে পালিয়ে আসা ৪০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকেও আশ্রয় দিয়েছে ইইউ। এতে চাপ আরও বেড়েছে বলে জানান ইলভা।
ভিসা বিধিনিষেধ ও উন্নয়ন সহযোগিতা কাটছাঁটের মাধ্যমে ইরাক, সেনেগালসহ ২০টি দেশের ওপর আরও চাপ প্রয়োগের পক্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও লাটভিয়া। ইইউতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে ব্যর্থ অভিবাসীদের ফেরতে নিতে এসব দেশ দুর্বলতা দেখাচ্ছে বলে মনে করছে জোটটি।
আগামী ৯-১০ ফেব্রুয়ারি ইইউ জোটের সব রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে অভিবাসন পরিস্থিত নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বরিশাল ডট নিউজ/স্ব/খ