স্টাফ রিপোর্টারঃ পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বাকপ্রতিবন্ধী কালাম খাঁনকে রক্তাক্ত আহত করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে চলছে ব্যাপক তোলপাড়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা বলে এক পক্ষ দুষছেন অপর পক্ষকে।
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে কুয়াকাটা পৌর শহরের কুয়াকাটা বাইক ওয়াস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সামনে অনাকাঙ্খিত এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুয়াকাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে নেয়া হয়।
নাকে আঘাত পাওয়ায় বর্তমানে বাকপ্রতিবন্ধী কালাম খাঁন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি পৌরশহরের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসীন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক করিম খানের ছেলে।
তবে বাকপ্রতিবন্ধী ওই যুবক রক্তাক্ত হওয়ার ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহাবুবুর রহমানের প্রতিবন্ধী কর্মীর ওপর নৌকা’র প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে বলে ভাইরাল করা হয় ওই যুবকের ছবি।
এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীর শতাধিক সমর্থকরা সেই ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে বিচারের দাবি জানান। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাকপ্রতিবন্ধী হলেও ছোটবেলা থেকেই একনিষ্ঠ আওয়ামী পন্থী এই কালাম। এছাড়া কুয়াকাটার সাংবাদিক মহলসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সাথেই সখ্যতা রয়েছে তার।
মঙ্গলবার রাতে কুয়াকাটা পৌরসভা কার্যালয়ের পাশের মাছবাজার সংলগ্ন এলাকায় যান তিনি। এসময় স্থানীয় ভ্যানচালক খলিল দালালকে সঙ্গে নিয়ে আ.লী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা কাজ পরিচালনার জন্য ভাড়া নিতে একটি অফিস কক্ষ দেখছিলেন।
কিন্তু ওইসময়ে অফিস কক্ষের পাশে একটি নোংরা স্থানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছিলেন অভিযুক্ত কালাম মল্লিক। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, বন্ধু কালাম মল্লিককে দেখে ইশারায় কাছে ডেকে নেন প্রতিবন্ধী কালাম। এসময় নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য অফিস কক্ষ ঠিক করা হয়েছে জানালে যুবক কালাম মল্লিক তাকে ধানের শীষ প্রতীক দেখিয়ে ইঙ্গিত দেন।
এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে স্থানীয় দোকানীরা দুজনকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রচার করতে আসা যুবককে গালে চড় বসিয়ে দেন কালাম। পরে হাতাহাতির একপর্যায়ে রেগে গিয়ে কালাম মল্লিকের হাতে থাকা চাবির গোছা দিয়ে প্রতিবন্ধী কালামের মুখমন্ডলে আঘাত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় যুবক জহির জানান, দুষ্টামির ছলে দুইজন মারামারি করেছে। আমি প্রথমে থামিয়ে দিলেও ধানের শীষ আর নৌকার যুদ্ধে দুজন ফের বিবাদে লিপ্ত হয়। এতে নৌকা কিংবা স্বতন্ত্র নিয়ে কোন কথা হয়নি। এছাড়া প্রতিবন্ধী কালাম প্রায়সময়ই নৌকা আর ধানের শীষ মার্কা নিয়ে এমন ঝগড়া করে থাকেন। অপর প্রত্যক্ষদর্শী মৎস্য ব্যবসায়ী বশির জানান, প্রকৃতপক্ষে দুই কালামের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল।
আহতের বাবা করিম খান বলেন, যে আমার ছেলের নাক ফাটিয়ে দিয়েছে তিনি একজন সক্রিয় বিএনপির কর্মী। ঘটনা যা জেনেছি তাতে নৌকা কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কেউ জড়িত ছিলনা।
এখন যেটা ছড়ানো হচ্ছে এটা দুঃখজনক। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে অপরাজনীতির প্রচারণা চালাচ্ছে একটা মহল।
পটুয়াখালী-০৪ আসনের নৌকার প্রার্থী মহিববুর রহমান বলে, রাতে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি বারেক ফোন দিয়ে জানানোর পর আমি সাথে সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলে নৌকার কর্মী কালামের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
কিন্তু এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কিছু লোকজন এই বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এবিষয়ে মহিপুর থানার ওসি ফেরদাউস আলম বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি এ বিষয়টি কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়।
এছাড়া কোন অভিযোগও আমরা পাইনি। তবে কারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তা অবগত নয় বলেও জানান তিনি।