ঘূর্ণিঝড় প্রবণ উপকূলীয় জেলাসমূহের মানুষকে দুর্যোগের পূর্বে প্রস্তুত করতে পূর্বাভাস—ভিত্তিক আগাম কার্যক্রমের কার্যকারিতা বিষয়ক দ্বিতীয় পর্যায়ের বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) নেতৃত্বে সংলাপের আয়োজন করে প্রত্যাশিত অ্যাকশন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ।
শনিবার বেলা ১১ টায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল শিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাসের হল রুমে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুবুর রহমান এমপি।
এসময় তিনি বলেন, “পূর্বাভাস—ভিত্তিক আগাম কার্যক্রমকে স্থানীয় পর্যায়ে বিস্তৃত করা এবং তৃণমূলের জনগণকে বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে সফলভাবে পরিচালনা করতে সরকার নানা নীতি কৌশল প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।” সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরি বলেন,
“পূর্বাভাস—ভিত্তিক আগাম কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি আধুনিক সংস্করণ, যা ২০১৫ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে পূর্বাভাস—ভিত্তিক অর্থায়ন (ঋনঋ) নামে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করে।
২০১৯ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হলে এটি সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে রূপ নেয়। তবে পূর্বাভাস—ভিত্তিক আগাম কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হলো সুনির্দিষ্ট তহবিল নিশ্চিত করা।
আজকে এই সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় প্রাথমিক অ্যাকশন প্রোটোকল এর আওতায় পূর্বাভাস—ভিত্তিক আগাম কার্যক্রমের জন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল গঠনে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ কামনা করছি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে তার দক্ষ ও কর্মঠ যুব স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
” দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান এনডিসি’র সভাপতিত্বে সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ.স.ম. ফিরোজ এমপি, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেনিকো স্কেলপেলি টাস্কফোসের্র চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব কে এম আব্দুল ওয়াদুদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান । বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্টি্র ডিরেক্টর ডোমেনিকো স্কেল পেলি বলেন,
“চলতি বছরের শুরুতে, ইউএন সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (সিইআরএফ) আগাম পদক্ষেপের জন্য ৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যার দ্বারা উপকূল অঞ্চলের ৬,২৫,০০০ মানুষের সহযোগিতা করা সম্ভব হবে। এছাড়া বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১ লাখ ৩৫ হাজার পরিবারকে টার্গেট করে একটি সাধারণ সুবিধাভোগীর তালিকাও তৈরি করেছি আমরা।” সংলাপে পূর্বাভাস—ভিত্তিক আগাম কার্যক্রমে তরুণ প্রজন্ম ও যুব স্বেচ্ছাসেবকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ঐক্যমত্যে পৌঁছান বক্তারা।
যেহেতু দুর্যোগে মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনতায় কাজ করেন তারা। এছাড়াও সংলাপে জাতীয় পর্যায়ের একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। একইসাথে উপকূলের চরম বিপদাপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে উপকারভোগীদের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা তৈরির প্রস্তাব করেন বক্তারা। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহিন আক্তার এমপি ও বেগম আশ্রাফুন নেছা এমপি, আইএফআরসি’র হেড অব ডেলিগেশন আলবার্টো বোকানেগ্রা, জার্মান রেড ক্রস,
আমেরিকান রেড ক্রস, স্টেপ কনসোর্টিয়াম, স্টার্ট নেটওয়ার্ক, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, ফায়ার সার্ভিস, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। পরে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও দুর্যোগে করনীয় বিষয়ক একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকরা অংশ নেয়।