স্টাফ রিপোর্টারঃ জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত ও অপহরণ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিট অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৮)।
তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ একটি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে র্যাব-৮ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী যুবায়ের আলম শোভন। আটককৃতরা হলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানাধীন মশুরিয়া এলাকার ডাকাত দলের সর্দার মেহেদী হাসান (৪০), জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকাত দলের সদস্য রেজাউল হক (৪০), দুমকি উপজেলার জলিসা এলাকার সাইফুল ইসলাম (২৮) এবং পটুয়াখালীর দক্ষিণ বাদুর গ্রামের ওমর ফারুক (৩৬)।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল কাজী যুবায়ের আলম শোভন জানান, গত ২৯ জুন গাজীপুর থেকে এক ব্যক্তিকে ময়মনসিংহে তার বাড়িতে পৌঁছে দেবার কথা বলে মাইক্রোবাসে তুলে সর্বস্ব কেড়ে নেয় ডাকাত চক্রটি। পরে অপহৃত ব্যক্তির বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টাকা আদায় করে চক্রটি।
পরে ময়মনসিংহের ভরাডোবা এলাকায় হাত ও পা বেঁধে ফেলে রেখে চলে যায়। তিনি আরও জানান- র্যাব ওই ভুক্তভোগী ব্যক্তির সংবাদ পাওয়ার পর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে চক্রটি গত ২ জুলাই দুপুরে বেনাপোল বন্দর থেকে দুইজন বিদেশ ফেরত যাত্রীকে টার্গেট করে মাইক্রোবাসে তুলে বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে এবং তাদেরকে হাত ও পা বেঁধে গোপালগঞ্জ এলাকার রাস্তায় ফেলে দেয়।
পরে চক্রের সদস্যরা লুট করা মালামাল মাদারীপুরের রাজৈর এলাকায় নিজেদের মধ্যে ভাগ বণ্টনের সময় র্যাব-৮ এর সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। এ সময় র্যাবের অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ একটি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়- দলনেতা মেহেদী ইতিপূর্বে ২০১৭ সালে ইয়াবা বহন ও সেবনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে গেলে সেখানে এই ডাকাত চক্রের আরেক পলাতক সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তারা যাবতীয় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পরবর্তীতে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও অপহরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দলনেতা মেহেদীর বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন থানায় একটি ডাকাতি মামলাসহ বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত আরও ১০ টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র মামলায় সে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আটক হয় এবং এ বছর মে মাসে সে জামিনে মুক্তি পায়। এছাড়াও অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া যায় বলে জানায় র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়- মূলত তারা সড়ক-মহাসড়ক, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিমানবন্দর, বাস স্ট্যান্ড, সীমান্ত বন্দর এলাকায় ওৎ পেতে থাকে এবং তাদের নিয়োজিত লোকজনের মাধ্যমে টার্গেট চিহ্নিত করে। কোন কোন সময় তারা যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে উঠায় এবং নিজেরাও যাত্রী বেশে গাড়িতে অবস্থান নেয়, অতঃপর কাজ শেষে যাত্রীদের নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
বিভিন্ন সময় তারা ভাড়ায় চালিত গাড়ি, উবার ও ছিনতাইকৃত গাড়ি ব্যবহার করে। এই ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি নিয়ে তারা ইতঃপূর্বে ছিনতাই করেছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদারীপুরের রাজৈর থানায় নিয়মিত মামলা করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
এছাড়াও অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সারা দেশব্যাপী র্যাবের অভিযান চলমান রয়েছেও বলে জানান র্যাবের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।