পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন থেকে বাড়ি-ঘর, চলাচলের রাস্তাঘাট, কৃষিজমি রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে ভেলায় ভেসে সংবাদ সম্মেলন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এবং এলাকাবাসী।
সোমবার সকাল বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য গণগবেষক মোসাঃ হালিমা আয়শা । সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য শাহীন মোল্লা, বেল্লাল হোসেন, রোকেয়া বেগম, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র নাইম, গণগবেষক মেহেদী হাসান, কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চের সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্থরা বলেন, “ আমরা পশ্চিম লোন্দা গ্রামের আনুমানিক ২৫০ টি দরিদ্র পরিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। আমরা জোয়ার ভাটায় ডুবি ভাসি। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং কৃষি জমি রক্ষায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ প্রয়োজন। লিখিত বক্তব্যে হালিমা আয়শা আরো বলেন,” আমাদের এই ন্যায্য দাবী আদায়ে গত বছর অক্টোবর মাস থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো মানবন্ধন করেছি।
জোয়ারের পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া অফিসে লিখিত আবেদন করেছি এবং বারবার আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমরা জানতে পেরেছি গতবছর আমাদের বেড়িবাঁধের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট নির্ণয় করে উপরস্থ দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
এই পরিস্থিতে আজকে আমরা কলাগাছের ভেলায় ভেসে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের জোর দাবী জানাচ্ছি। এরপরও যদি আমাদের দাবী না মানা হয় তাহলে পরবর্তীতে আমরা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বিভাগ বরিশাল অফিসে আমাদের দাবী নিয়ে যাবো। এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও অমাবস্যা-পূর্নিমায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না।
চুলায় পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করতে পারে না। গর্ভবতী নারী এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই ইসগেটসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানায় পরিবারগুলো। তারা বলেন, “আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। এই অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে আমাদের বাঁচান।“ লিখিত বক্তব্যে বলা হয়,” আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে আমরা কেন ভেলায় ভেসে সংবাদ সম্মেলন করছি। যখন আমাদের এলাকায় জোয়ার পানি প্রবেশ করে তখন নৌকা বা ভেলা ছাড়া আমাদের চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই মুহুর্তে আমাদের বাড়ি-ঘর, রাস্তা ঘাট, স্কুল সব পানিতে তলিয়ে আছে তাই আমরা কলাগাছের ভেলায় ভেসে এই সংবাদ সম্মেলন করছি। এই পরিস্থিতিতে অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে আমাদের প্রায় ২৫০টি পরিবারকে এবং ২০০ একর তিন ফসলী জমি রক্ষার জন্য পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর তীরে দক্ষিণ দিকে অ্যাভোকেড নূর হোসেনের বাড়ি থেকে উত্তর দিকে খালেদ প্যাদের বাড়ি পর্যন্ত আনুমানিক ৩ কিঃ মিঃ ¯øুইসগেটসহ টেকসই রিং বেড়িবাঁধ প্রয়োজন।
বেড়িবাধঁ নির্মান করে ২৫০টি পরিবারকে এবং ২০০ একর তিন ফসলী জমি রক্ষার প্রয়োজন। গ্রামবাসীরা বলেন, “ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ে ৪ দিন পর্যন্ত আমাদের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে ছিল। জোয়ার-ভাটায় কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বছরে একবার চাষাবাদ করতেও আমাদের কষ্ট হয়।“ শাহীন মোল্লা বলেন, আমাদের প্রায় ২০০ একর জমি তলিয়ে থাকে। তিন ফসলী এই জমি অথচ আমরা এক ফসলও চাষাবাদ করতে পারি না। আমরা অনেক কষ্টের মাঝে আছি।
আমাদের এখানে একটা টেকসই বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন। হালিমা আয়শা বলেন, আমরা এই এলাকার কয়েকজন স্বেচ্ছাসেববক মিলে দীর্ঘ দুইমাস ধরে একটি গবেষণা করেছি। আমাদের গবেষণায় এই এলাকার বিভিন্ন সমস্যা পেয়েছি যার মধ্যে কৃষি উৎপাদন কম হওয়া, যাতায়ত ব্যবস্থার সমস্যা পেয়েছি। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে অনাগ্রহী। সুচিকিৎসার অভাব।
সব কিছুর মূলে গিয়ে একটা সমস্যা পেয়েছি যে টেকসই বেড়িবাঁধ নেই। উল্লেখ্য গত বছর অক্টোবর মাস থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো মানবন্ধন, জোয়ারের পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন সহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়ে আসছে।