৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া প্রয়াত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সাক্ষীরা।
এর মধ্যে মামলার বাদীসহ চারজন সাক্ষী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে স্বেচ্ছায় তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করার অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার এ মামলার বাদীসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করে। তারা তখন নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর শেখানো বক্তব্য পেশ করেন। ট্রাইব্যুনালে তাদের শেখানো বক্তব্য রেকর্ড করে এর ভিত্তিতে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই সাক্ষীদের মধ্যে একজন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডারও রয়েছেন। যিনি এ মামলার বাদী। এছাড়া সেসময় সাঈদীর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সত্য সাক্ষ্য দিতে এলে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর আদালতের গেট থেকে অপহরণ ও গুম হওয়া ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত বিশা বালির ভাই সুখরঞ্জন বালিও শেখ হাসিনা ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।
তাকে তখন চরম নির্যাতন করে অর্ধমৃত অবস্থায় ভারতের বর্ডার গার্ড বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিএসএফও তাকে নির্যাতন করে। তিনি সে দিশের কারাগারে ৫ বছর বন্দি ছিলেন। পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফেরেন।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, বাদীসহ সাক্ষীদের দেওয়া অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য আদায়ে জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্তত ৪০ জনকে বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যাওয়ায় এ মামলার মরণোত্তর পুনঃবিচার হচ্ছে না।
কারাবাসে থাকাকালীন ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাকে কারা হেফাজত থেকে চিকিৎসার নামে হাসপাতালে এনে মারা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত হবে। আইনি বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে শেখ হাসিনাসহ যার যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাদের সবার নামে প্রতিবেদন দাখিল করবে তদন্ত সংস্থা। পরবর্তী সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আমরা ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন কোনো অভিযোগ তদন্ত সংস্থায় পাঠানো হয়, তখন সেটি রেজিস্টারে এন্ট্রি করা হয়। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা সংক্রান্ত যত অভিযোগ এসেছে, সবই তদন্ত সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের কতটুকু তদন্ত হয়েছে, এখনই বলা যাচ্ছে না।
অপর এক প্রশ্নে মিজানুল ইসলাম বলেন, কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে। কারা এটি করেছেন, কীভাবে করেছেন-তদন্তে প্রমাণসাপেক্ষে উপযুক্ত আইনে তাদের বিচার হবে।
তদন্ত সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন সাক্ষী। তা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করবে তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবে প্রসিকিউশন।