More

    ১১ বছরেও চালু হয়নি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

    অবশ্যই পরুন

    উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর মানুষের আধুনিক চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ও আশার প্রতীক হওয়ার কথা ছিল পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যেখানে চিকিৎসাসেবা নেয় জেলার ৮ উপজেলার মানুষসহ পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলারও কয়েকটি উপজেলার মানুষ। কিন্তু তাদের আধুনিক চিকিৎসা পাওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।

    কাগজে-কলমে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল লেখা থাকলেও প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পরও চালু হয়নি এর কার্যক্রম। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তিন দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। ফলে এখনো রোগীদের ভরসা সেই পুরোনো ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার চেয়েও তিনগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা বাধ্য হয়ে সেবা নিচ্ছেন মেঝে করিডোর ও বারান্দায়। সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪০ শয্যার জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছে ২০০ শিশু। একই অবস্থা সার্জারি (পুরুষ) ও গাইনি ওয়ার্ডেও।

    ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও নানা রোগ নিয়ে এখানে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৮০০ রোগী। এক বছরের শিশু জুনায়েদের চিকিৎসা করাতে আসা মা মুক্তা বেগম বলেন, ছেলেটার হঠাৎ অনেক জ্বর ও সর্দি, ডাক্তাররা ভর্তি দেছে। কিন্তু এহানে আইয়া কোনো বেড খালি পাই নাই। এহন ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে আছি। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী মো. ইউসুফ হাওলাদার বলেন, ভেতরে যতটুকু জায়গা আছে সব বুকিং, এজন্য আমরা বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি। এ জায়গায় কোনো ফ্যান নাই, কোনো বাতি নাই।

    রোদ আইলে রোদ লাগে, বৃষ্টি আইলে বৃষ্টিতে আমরা থাকতে পারি না। খুব কষ্টে আছি। বারান্দায় বিছানা বানিয়ে সেবা নেওয়া আরেক রোগী মিনারা বেগম বলেন, বারান্দায় বৃষ্টি আইলেই আমরা যে সিট লইছি তা ভিজ্জা তলাইয়া যায়। আমাগো থাকতে যথেষ্ট কষ্ট হয়। হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন রোগী সজিব হোসেন বলেন, এখানে আশপাশের ড্রেনে অনেক মশা। যে কোনো সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রোগীদের। হাসপাতালের নতুন ভবনগুলো চালু করে রোগীদের সেখানে চিকিৎসা দিলে ভালো হতো। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার এসব সংকট কমাতেই ২০১৪ সালে সরকার অনুমোদন দেয় ২৫০ শয্যার পাশেই ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের।

    যার ব্যয় ধরা হয় ৫৪৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে শুরু হয় নির্মাণকাজ। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। কিন্তু ভূমিগ্রহণ জটিলতা ও করোনা মহামারিসহ আরও নানা অজুহাতে তিন দফা সময় বাড়িয়ে এখন লক্ষ্য ২০২৬ সালের জুন মাস। এদিকে নির্মাণ ব্যয় ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫১ কোটি টাকায়। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক ড. এস এম কবির হাসান বলেন, ২৫০ শয্যার পুরাতন হাসপাতালে ৫০০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে এটা সত্যিই অমানবিক। যদি আমরা আগামী ১-২ মাসের মধ্যে নতুন ভবনে যেতে পারি তাহলে এই ভোগান্তি দূর হবে বলে আশাবাদী।

    হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু নানা জটিলতায় এখনো আটকে আছে। আমি কিছু দিন এটার প্রকল্প পরিচালক ছিলাম তখন ২০২৪ এর জুনেই এটা হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু আমরা তখন দেখলাম গণপূর্ত খুবই ধীর গতিতে এটার কাজ করে। এরপর ১ বছর বাড়িয়ে ২৫ এর জুনে এটা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখনো এটা পাইনি। হাসপাতাল ভবনটি আমরা উদ্বোধন করতে পারিনি, আবাসন সংকট থাকায় আমরা শুধু মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হোস্টেলটি চালু করেছি।

    তাও তাদের দাবির মুখে। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি এই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে। নতুন প্রকল্পে বিদ্যুতের জন্য হাসপাতাল ভবন, একাডেমিক ভবন ও আবাসিক ভবনের জন্য তিনটি সাবস্টেশন করার কথা। কিন্তু এখনো দেখলাম গণপূর্ত হাসপাতাল ভবনে প্লাস্টার করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন,পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ প্রকল্পে আমাদের স্বাভাবিক অগ্রগতি ৯৩ শতাংশ। কাজ এখনো চলমান আছে।

    হাসপাতাল ভবন ও একাডেমিক ভবনের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন বিদ্যুৎ সংযোগ বাকি। হাসপাতাল ভবনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের অ্যাপ্লিকেশন করা হয়েছে। সংযোগ পেলে হাসপাতাল ও একাডেমিক ভবন চালু করব। কাজ চলছে, আশা করি ২০২৬ এর জুনের মধ্যেই আমরা কাজ হস্তান্তর করতে পারব।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    পবিপ্রবিতে মিথ্যা অভিযোগে র‌্যাগিং ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

    পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৯...