More

    সুন্দরবনে থামছে না হরিণ শিকার শিকারীরা তৎপর নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন!

    অবশ্যই পরুন

    মোঃ রোকনুজ্জামান শরীফ, পিরোজপুর: সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদেশ ও ভারত জুরে বিস্তৃত।সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার।তার মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে রয়েছে প্রায় ৩,৯৮৩ বর্গ কিলোমিটার।উইকিপিডিয়া অনুসারে।

    সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ খুলনা,সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট জেলা জুড়ে বিস্তৃত।যা ২টি বিভাগে বিভক্ত ১. সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ,বাগেরহাট ২.সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ,খুলনা।সুন্দরবনের এই বিশাল বন এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী যা সুন্দরবনকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত করেছে।সুন্দরবনে মোট ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। ২০১৮ সালের বাঘ শুমারিতে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে ১ লক্ষ ৪২ হাজার হরিণের হিসাব পাওয়া যায় সে হিসেবে বর্তমানে হরিণের সংখ্যা বেশি থাকার কথা।বাগেরহাট জেলার মোট আয়তন ৫,৮৮২.১৮ বর্গকিলোমিটার,যার মধ্যে ১,৮৩৪.৭৪ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল,যা সুন্দরবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।এখানে ছয়টি স্টেশন রয়েছে সেগুলো হচ্ছে–

    ১. বিভাগীয় অফিস, সুন্দরবন পূর্ব, বাগেরহাট
    ২. বগী ফরেস্ট অফিস
    ৩. চাঁদপাই স্টেশন অফিস
    ৪. জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ি (দুবলা)
    ৫. ধানসাগর ফরেস্ট অফিস
    ৬. শরণখোলা স্টেশন অফিস

    সুন্দরবনের চারপাশে নানা রকম ভোক্তা শ্রেণির উত্থানের ফলে হরিণের মাংসের চাহিদা বেড়েই চলেছে।সৌখিন বাবুদের প্লেটে শোভা পায় হরিণের মাংস।সুসংগঠিত শিকারি চক্রগুলো দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।চক্রগুলো বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিত্য নতুন কৌশল আবিষ্কার করছে।দৃশ্যমান নাইলনের রশির পরিবর্তে তারা এখন ব্যবহার করছে স্টেইনলেস স্টিলের তার যা সুন্দরবনের আলো-ছায়ার পরিবেশে প্রায় অদৃশ্য।সংঘবদ্ধ শিকারি চক্র প্রতিনিয়ত সুন্দরবনে হরিণ নিধন করে চলেছে।হরিণ পাচার প্রতিরোধে বনরক্ষীদের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

    বন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নির্দৃষ্ট কিছু সময়ে সুন্দরবনের হরিণ শিকার বৃদ্ধি পায়।শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালি,চান্দেশ্বর, ডিমের চর,পানির ঘাট ও সোনাতলা এলাকা হরিণ পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরগুনার পাথরঘাটার চরদোয়ানি, কাঠালতলি, জ্ঞানপাড়া ও মঠবাড়িয়ার বাবুরহাট এলাকার কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র রাতের আঁধারে কচিখালি, চান্দেশ্বর, ডিমেরচর এলাকায় ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে।আবার শিকারিরা সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে এনে শরণখোলার সোনাতলা,পানিরঘাট এলাকা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় হরিণের মাংস পাচার করছে।

    অনুসন্ধানে জানা গেছে,সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের অন্তর্গত বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ,মোংলা, রামপাল,খুলনার দাকোপ এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় একাধিক পেশাদার হরিণ শিকারি চক্র সক্রিয় রয়েছে।তারা জেলে,মৌয়াল,কাঠুরিয়া,কাঁকড়া,ঢেকির শাক সংগ্রাহক সেজে হরিণ শিকারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি খণ্ড খণ্ড ভাবে বনে নিয়ে যায় এবং পরে সেগুলো একত্র করে ফাঁদ তৈরি করে। শিকারের পর সেইসব সরঞ্জাম নির্দিষ্ট গাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে রাখে পরবর্তী ব্যবহারের জন্য।বন বিভাগের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় চেতনানাশক স্প্রে টোপ হিসেবেও ব্যবহারের খবর পাওয়া যায়।

    স্থানীয় মৌয়াল,জেলে, কাঁকড়া সংগ্রাহক এবং হরিণ শিকারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে,বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চোরা কারবার চালানো হয়।

    বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে,গত জুন থেকে আগস্ট তিনমাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সুন্দরবন জুড়ে নানা রকম হরিণ শিকারের ফাঁদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ১৮৯ টি অভিযোগ,৯৪ টি মামলা,১৪৮ জন গ্রেপ্তার,৭ জন পলাতক,২৪০০০ ফুট মালাফাঁদ উদ্ধার,১৩০ টি ছিটকা ফাঁদ,৬০০ হাটাফাঁদ,১৫৫ জন বিষ প্রয়োগকারী মৎস্যশিকারী আটক,হরিণ শিকারীদের বিরুদ্ধে ৮ টি মামলা,গ্রেপ্তাকৃত ১০ জন কোর্টে প্রেরন, ৪৯ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার ও একাধিক নৌকা ট্রলার আটক করা হয়েছে।এছাড়া ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’-এর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ফাঁদ জব্দ করা হয়েছে।উদ্ধারকৃত অসংখ্য ফাঁদ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।বর্তমানে প্রতিদিন নানা রকম ফাঁদ উদ্ধার চলমান রয়েছে।

    সুন্দরবনের আশপাশের মাছের ডিপো ও শুটকির দাদনদারদের সহায়তায় জেলেরা হরিণ শিকারে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে।

    তথ্য অনুযায়ী, শিকারিরা বনভূমির অবস্থান সম্পর্কে অত্যন্ত অভিজ্ঞ থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টেরপেলে মুহূর্তেই গহীন অরণ্যে লুকিয়ে পড়ে,ফলে তাদের আটক করা কঠিন হয়ে পড়ে।

    শরণখোলা ফরেস্ট রেঞ্জের আওতায় সোনাতলা,পূর্ব খুড়িয়াখালী,দাসের ভাড়ানী, চরদুয়ানী,জ্ঞানপাড়া, কাঁঠালতলী গ্রাম ছাড়াও রামপাল,মোংলা ও দাকোপ উপজেলায় অনেক শিকারচক্র সক্রিয় রয়েছে।

    চাঁদপাই রেঞ্জের আওতায় মোংলা,ঢাংমারি, ভোজনখালী ও আশপাশের অঞ্চলগুলোতেও বেশ কিছু চক্র সক্রিয়।তারা জেলে বা মৌয়াল সেজে বনে ঢুকে ফাঁদ পেতে কচি পাতা বা ডালে চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করেও হরিণ শিকার করে।

    সূত্র জানিয়েছে, কিছু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি এই চোরাশিকারে মদদ দিচ্ছেন।একটি অবৈধ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে যার মাধ্যমে সিন্ডিকেট সদস্যরা সহজেই মাংস সংগ্রহ করতে পারে। বিশেষ আপ্যায়ন বা ঘুষ হিসেবে দুষ্প্রাপ্য হরিণের মাংসের চাহিদা রয়েছে।১,২০০–১,৮০০ টাকা কেজি দরে এই মাংস গোপনে বিক্রি হচ্ছে।শৌখিন বাবুদের কাছে হরিনের চামড়ার খুব কদর রয়েছে।বাসা-বাড়িতে শোভাবর্ধক হিসেবে হরিনের চামড়া শোভা পেলেও কারও কিছু যায় আসে না।

    শিকারিরা নিত্য নতুন কৌশল নিচ্ছে,পুরো সুন্দরবন ফাঁদের আওতায় রয়েছে।সুন্দরবনের গহীন অরন্যে মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও বনরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে এসব ফাঁদ উদ্ধার করছেন।বাঘ,কুমির,বানর ও সাপের ভয় থাকলেও তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।প্রতি বনরক্ষীকে জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রায় ১,৮০০ হেক্টর বন পাহারা দিতে হয়।সুন্দরবনে জোয়ারের সময় চেনা-জানা পথ পানিতে ডুবে যায় তখন আগ্নেয়াস্ত্র শরীরে বেঁধে সাঁতার কেটে বন পাহারা দিতে হয়।পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটে ৪২৬ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও ১৫০ জন লোকবল সংকট রয়েছে।যে কারণে বনরক্ষা কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।সুন্দরবনের যেখানে বেশি হরিণ দেখা যায়–

    ১.কটকা এলাকায় বনরক্ষীদের সাথে অবাধে হরিণ বিচরণ করে।
    ২.করমজল একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং এখানে হরিণের সাথে মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যায়।
    ৩.হিরণ পয়েন্ট একটি সংরক্ষিত এলাকা এবং বাঘ, হরিণ,বানর,পাখি ও সরীসৃপের নিরাপদ আবাসস্থল।
    ৪.কচিখালী এলাকাতে হরিণের অবাধ বিচরণ দেখা যায়।
    ৫.সুপতি, ঢাংমারী, কোকিলমুণি, দুবলা অফিস পাড়া স্থানগুলোতেও হরিণের আনাগোনা রয়েছে।

    সুন্দরবনে হরিণ শিকারের কারণ:
    ১.অর্থনৈতিক কারনঃ
    হরিণের মাংস ও চামড়ার চাহিদা এবং চোরা শিকারিদের অর্থনৈতিক লাভ।
    ২.সহজলভ্য শিকারঃ
    শুষ্ক মৌসুমে হরিণ শিকারের প্রবণতা বাড়ে, তখন খাল ও নদীতে পানি কমে যাওয়ায় হরিণের বিচরণ ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাওয়ায় হরিণ শিকার সহজ হয়।
    ৩.আইন প্রয়োগের অভাবঃ
    অনেক সময় হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
    ৪.দারিদ্র্যতাঃ
    সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার দরিদ্র মানুষেরা পেটের দায়ে হরিণ শিকার করে থাকে।
    ৫.শিকারীদের অগ্রীম দাদনঃ
    হরিণের মাংস সহজলভ্য নয় বিধায় শিকারীদের আগাম দাদন দিয়ে রাখে এক শ্রেনীর মাংস প্রেমিক মানুষ।
    ৬.সীমাবদ্ধতাঃ
    বন বিভাগের জনবল ও বনরক্ষা উপকরনের অভাব।

    সুন্দরবন রক্ষায় দ্রুততম সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

    ১.বনবিভাগের জনবল ও তাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি।
    ২.নিরাপদ ও সুরক্ষিত দ্রুত গতির পর্যাপ্ত জলযান সরবরাহ।
    ৩.বনরক্ষীদের অসুস্থতায় দ্রুততম যানবাহন সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করন।
    ৪.বনরক্ষীদের আবাসন ব্যবস্হা।
    ৫.হরিণ শিকার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষা উপকরন সরবরাহ।
    ৬.কঠোর শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে আইন সংশোধন ও প্রয়োগ।
    ৭.উর্ধতন বন কর্মকর্তাদের বন এলাকা পরিদর্শন।
    ৮.উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করণ।
    ৯.বনরক্ষীদের ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পুরষ্কারের ব্যবস্হা।
    ১০.স্বেচ্চাসেবী সংগঠণগুলোর অংশগ্রহন নিশ্চিতকরণ।
    ১১.বন বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করন।

    সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন ,”সুন্দরবনে হরিণ শিকার সহজে বন্ধ হচ্ছে না কারণ চর্তুপাশের লোকালয়ের মানুষের ধারনা, আত্মীয়-স্বজনদের হরিণের মাংস খাওয়াতে পারলেই মনে করে বড় কিছু অর্জন হল।সরকার নিষিদ্ধ যে কোন কাজ অবৈধ সুতরাং হরিণের মাংস খাওয়া সম্পুর্ন অবৈধ।এক শ্রেনীর মানুষ অগ্রীম টাকা দিয়ে হরিণ শিকারিকে উৎসাহিত করছে।

    নানা সময় আটককৃত হরিণ শিকারিদের নিকট থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন করতে অধঃস্থন কর্মকর্তারা হন্নে হয়ে হরিণের মাংস পাওয়ার চেষ্টা করে।শিকারীদের কাছে বিভিন্ন পরিমানের হরিণের মাংসের পোটলা থাকে।হরিণের মাংস নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাংসের সাথে চামড়া রাখা হয়।তারা বলেছে ফাঁদে শুকর ধরা পড়লে শুকরের মাংস কেটে হরিণের ভিতর দিয়ে দেয়,যাতে সহজে বুঝতে না পারে।হরিণের মাংস হিসেবে শুকরের মাংস চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।কে কি খাচ্ছে তা সঠিক কেউ জানে না।পচা মাংস,শুকরসহ অন্যান্য প্রাণীর মাংসও খাচ্ছে।হরিণ শিকার বন্ধ করতে সকলকে সচেতন নিরুৎসাহিত হতে হবে।”

    সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন ,”জনবল সংকট সহ নানা রকম সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও বনরক্ষীরা কঠোর পরিশ্রম করে সুন্দরবন পাহারা দিচ্ছে।এক শ্রেনীর অসাধু লোক নতুন নতুন কৌশলে হরিণ শিকার করছে।আমাদের লোকজন নিয়মিত টহল চালিয়ে যাচ্ছে তার পরেও হরিণ শিকার ঠেকানো যাচ্ছে না।হরিণ নিধন রক্ষার্থে সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ। “

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    দুমকীতে সংবাদ প্রকাশের পর কিশোরকে নির্যাতনকারী আটক

    ওবায়দুর রহমান অভি, (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর দুমকীতে সংবাদ প্রকাশের পর কিশোরকে হাত- পা বেঁধে নির্যাতনকারী জলিল সিকদার(৫৫) কে আটক...