বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গ্রাম থেকে গ্রামে, ঘরে ঘরে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। যেভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারে থাকাকালে গ্রাম পর্যায়ে পল্লী চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের কোনো রোগীকে আর হাসপাতালের বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে না। রোগীরা বেডেই তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পাবেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পরিবারের মাকে একটি চিকিৎসা কার্ড দেওয়া হবে। ওই কার্ডের মাধ্যমে পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই চিকিৎসা নিতে পারবেন।
গতকাল বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ীতে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমানের পরামর্শে আয়োজিত স্পেশাল ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। নারীদের স্বাবলম্বী, শিক্ষা, বয়স্ক-ভাতা, চিকিৎসা, কৃষক ও কৃষি বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য। আল্লাহপাক আমাদের সৃষ্টি করেছেন দায়িত্ব পালন করতে। ২৭ বছর আগে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে মানুষ যাতে কম অসুস্থ হয়। সেজন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে কী করলে মানুষের ডায়াবেটিস হবে না, হৃদরোগ হবে না।
অনেক দিন পরে নিজ বাড়িতে উপস্থিত হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আজকে নিজের পরিচিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। আমরা যদি মানুষের ভালোবাসায় ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে। যাতে হাসপাতালের রোগীদের আর মেঝেতে শুয়ে থাকতে না হয়। ভবিষ্যতে বাড়তি রোগীদের সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কেউ যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে নজর দেওয়া হবে। দেশের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাষা শেখানো হবে। ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা ভালো চাকরি পায়। তারা যেন চাকরি না করলেও নিজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার আদর্শের সৈনিকদের গড়ে উঠতে হবে। আমরা যেন নিজেদের জনগণের সেবক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি। এটি হোক আমাদের আগামী দিনের শপথ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি ডা. জুবাইদা রহমান বলেন, মানব সভ্যতার এক ক্রান্তিলগ্নে আমরা আজ পৌঁছে গেছি। আর্তমানবতার সেবায় আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে কাজ করতে পারি। এই ফাউন্ডেশনের প্রতিটি সদস্যের আত্মত্যাগ ও মানুষের জন্য পথ চলা ইতিহাস হয়ে থাকবে। স্বল্প সামর্থ্যে বহু মানুষকে আকাশচুম্বী সফলতা দিয়েছে এই ফাউন্ডেশন। আগামীতে হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মানবাধিকার উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো প্রতীয়মাণ হবে এই জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, ড্যাব বগুড়ার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শাজাহান আলী, গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটন, বগুড়া হেলথ ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট উপকমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মো. ইউনুস আলী।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মাদ আবু নাছের জানান, মেডিকেল ক্যাম্পে প্রায় ৮ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে বিভিন্ন বিভাগের ৬০ জন চিকিৎসক এসেছিলাম। ইনশাআল্লাহ ভালো চিকিৎসাসেবা দিতে পেরেছি।
শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে বিএনপি অবশ্যই একমত : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। জনগণের ভোটে বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বাড়ানো কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করবে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘সম্মানিত শিক্ষকদের সমাবেশে অনেকের বক্তব্যে তাদের চাকরি জাতীয়করণ প্রসঙ্গ এসেছে। কেউ কেউ মনে হয় আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কথা বলেছেন। এ ছাড়াও আপনাদের এই সংগঠনের বাইরেও বেসরকারি শিক্ষকদের বেশ কিছু দাবি রয়েছে। দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে অবশ্যই একমত।’
তিনি বলেন, বিএনপি যতবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তখন বেশির ভাগ দাবিগুলো পূরণ হয়েছে বলে আপনাদের বক্তব্য থেকেই উঠে এসেছে। কাজেই আপনাদের এসব দাবি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগ গ্রহণ করি না কেন, শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা, সম্মান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে আমরা যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটিতে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অবশ্যই রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বাড়ানো কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচক বিবেচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করবে।’