বরিশালে একদিনে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজনকে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের অভিযোগ স্বজনদের। অপর দুজনের মধ্যে একজনের মরদেহ আবাসিক হোটেল এবং অপরজনের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সাড়ে ১০টা থেকে দুপুরের মধ্যে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক, বরিশাল নগরীর এবং উজিরপুর উপজেলা থেকে পৃথকভাবে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের শিকার যুবক শাকিল হাওলাদার (১৮) পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার চরপাড়া ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের ছেলে।
তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। হোটেল কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহটি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কলকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম হাওলাদারের (৪৫)। তিনি নগরীর ফলপট্টি রোডের আবাসিক হোটেল পার্ক এর নাইটগার্ড ছিলেন। অপরজন আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত যুবকের মৃতদেহ উজিরপুর উপজেলার কচা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্ব স্ব থানার পুলিশ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাটের পুল এলাকায় শাকিল হাওলাদার নামের যুবকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে থানা পুলিশ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
শাকিলের বাবা জসিম হাওলাদার জানান, গত দুদিন ধরে নিখোঁজ ছিল শাকিল। এ বিষয়ে দুমকি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে থানা পুলিশ তার পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের স্বজনদের খবর দেয়। শাকিলের বাবার অভিযোগ, নিখোঁজের সময় শাকিলের সঙ্গে অটোরিকশা ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং সন্তান হত্যার বিচার দাবি করেছেন জসিম হাওলাদার।
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মুখমণ্ডল থ্যাঁতলানো এবং হাত-পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। নিহতের পরিবারকে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর ফলপট্টি রোডের আবাসিক হোটেল পার্ক থেকে নাইটগার্ড আব্দুল হাকিম হাওলাদারের মদেহ উদ্ধার করেছে মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. সেলিম হাওলাদার হোটেল স্টাফসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানান, নাইটগার্ড আব্দুল হাকিম রাতে ডিউটিরত অবস্থায় অসুস্থতা বোধ করেন। এজন্য হোটেলের একটি রুমে বিশ্রাম নিতে যান তিনি। সকালে হোটেল কর্তৃপক্ষ ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেলে থানা পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে আব্দুল হাকিমের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, আব্দুল হাকিমের মরদেহ রুমের মধ্যে দরজার পাশে উপুড় হয়ে পড়া ছিল। তবে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে স্বাভাবিক মৃত্যু। তারপরও মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হতে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মেয়ে নাহিদা আক্তার বলেন, বাবা রাতে অসুস্থবোধ করলেও হোটেল কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে নেওয়া বা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করেনি।
এমনকি তারা আমাদের পরিবারের কাউকেও খবরটি জানায়নি। বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক ভাবেই হয়ে থাকলেও তিনি হোটেল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেউরী বাড়ি সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীর শাখা কচা নদী থেকে ৩০ বছর বয়সি অজ্ঞাত যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ। এ বিষয়ে মডেল থানার ওসি রকিবুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা কচা নদীতে মরদেহ ভাসতে দেখে থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। উদ্ধার হওয়া যুবকের নাম-পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
