সম্প্রতিককালে মানব পাচার প্রতিরোধে র্যাব-৮, বরিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত ২৮ মে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির দক্ষিণ শহর মিজদায় আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র অভিবাসন প্রত্যাশিদেরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
বিষয়টি র্যাব-৮ এর নজরে আসলে র্যাব-৮ এর অধীনে ১১টি জেলার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট মানব পাচারকারীদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতঃ দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৮ জানতে পারে যে, দীর্ঘদিন যাবৎ একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্র ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মোটা অংকের বেতনের চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার করছে।
উক্ত চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইতালিতে সমভাবে সক্রিয়। এদের শিকার মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের উঠতি বয়সের বেকার যুবকরা।
বর্ণিত চক্রটি বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে যুবকদের লিবিয়ায় পাচার করে থাকে। তৎপরবর্তীতে লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের সদস্যরা লিবিয়ার বন্দিশালায় তাদেরকে আটক রেখে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং উক্ত বন্দীদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী করে।
টাকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদেরকে লিবিয়া হতে নৌকাযোগে অবৈধ পন্থায় ইতালিতে গমনের সুযোগ করে দেয়া হয়।
ক্ষেত্র বিশেষে বন্দীপ্রতি উক্ত চক্রটি পাঁচ থেকে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ আদায় করে বলে র্যাব জানতে পারে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৮ এর একটি দল গত ০৩ জুন গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানাধীন লোহাইর গ্রামে অভিযান চালিয়ে মোঃ সেন্টু শিকদার(৪৫), পিতাঃ মৃত রত্তন শিকদার, সাং-লোহাইড়, থানাঃ মুকসুদপুর, জেলাঃ গোপালগঞ্জ এবং যাত্রাবাড়ী গ্রাম থেকে মোছাঃ নার্গিস বেগম (৪০), স্বামীঃ মোঃ আঃ রব মোড়ল, সাং-যাত্রাবাড়ী, থানাঃ মুকসুদপুর, জেলাঃ গোপালগঞ্জকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উক্ত চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেন এবং প্রাপ্ত গোপন তথ্য সমূহের সত্যতা পাওয়া যায়। বর্ণিত চক্রের লিবিয়া অংশের অন্যতম প্রধান মোঃ বশির শিকদার (ধৃত ১নং আসামী সেন্টু শিকদারের ভাই) ও মোঃ সেলিম শেখ(৩৫)।
চক্রটি লিবিয়া প্রবাসী মোঃ বশির শিকদার(৩৫) ও মোঃ সেলিম শেখ(৩৫) এর নেতৃত্বে লিবিয়ার বন্দীশালায় পাচারকৃত বাংলাদেশি যুবকদেরকে অর্ধাহারে-অনাহারে রেখে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং গ্রেফতারকৃত মোঃ সেন্টু শিকদার(৪৫) মোছাঃ নার্গিস বেগম(৪০)সহ বাংলাদেশে অবস্থানরত পাচারকারীরা ভিকটিমদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী এবং পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ মোতাবেক মামলা দায়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।