More

    প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডেল্টা প্লান ২১ এর আঙ্গিকে আমরা কাজ করছি : পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

    অবশ্যই পরুন

    পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিম বলেছেন, বর্ষা মৌসুমে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ভাটির দেশের মানুষ, আমাদের উজানে ভারত, নেপাল, ভূটান, চীন অবস্থিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি, নদীর তীরের ভাঙ্গন হচ্ছে। বৃষ্টির পানি উজানের দেশ থেকে ভাটিতে এসে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। আর সেখান থেকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ২ বিলিয়ন মেট্রিকটন পলি মাটি আমাদের দেশে আসছে। পলি আসাতে আমাদের নদীর নাব্যতা নস্ট হয়। আমরা ড্রেজিং করলেও ৬ মাসের মধ্যে নদীগুলো পূর্বের অবস্থায় থাকে না, পরিবর্তন হয়ে যায়। যারজন্য বর্ষার সময় প্রচুর বৃষ্টিহলে পানিগুলো দুকুল ছাপিয়ে গ্রাম প্লাবিত হয়।

    শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকা সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী ও বেরিবাধ পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

    এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ডেল্টা প্লান ২১ এর আঙ্গিকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বড় বড় নদী যেগুলো ৯-১২ কিলোমিটার প্রস্থ সেগুলোকে আমরা ছোট করে ৫-৭ কিলোমিটারের ভেতরে নিয়ে আসবো। তারপর ড্রেজিং করে তার মাটি দিয়ে দুইপারের জমি রিক্লেম করবো। সেখানে আমরা ফসল উৎপাদন করবো এবং কিছু কিছু জায়গাতে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল প্লট দেয়া হবে। যেখানে শিল্প কারখানা হবে, এলাকার লোকজনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু সে সমস্ত এলাকাতে আমরা কোন বসতি গড়তে দিবো না। আর সেখানে নির্ধারিত জায়গাতে বাধ দিয়ে বনায়নও করা হবে।

    প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ জুলাই বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে নির্দেশনা দিয়েছেন পুরো বাংলাদেশে ১ কোটি বৃক্ষরোপন করতে হবে এবং দেশকে বনায়ন করে সবুজ বেস্টনীতে নিয়ে আসতে হবে। আর ২৫ শতাংশ বনায়ন করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০ লাখ বৃক্ষরোপন করছে। দুটি ফেইজে ২ হাজার ৫ শত কিলোমিটার এলাকাতে বৃক্ষরোপন করা হবে।

    তিনি বলেন, ড্রেজিং করে নদীর প্রস্থ যদি কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আমরা সেগুলোতে নিয়মিতো খনন কাজ চালিয়ে যেতে পারবো। তাহলে এখনকার মতো বন্যা হবে না। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা ভাটির দেশের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে আমাদের ভাটির দেশে এ ধরণের পানি আসতে হবে এবং এটা নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মানুষজনের দুঃখ-দুর্দষা যতো কম করা যায়। সাতক্ষীরায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাতে আমরা চারটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তিনটি এরইমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে চলে গিয়েছে যারমধ্যে পোল্ডার নম্বর ১৪ তে ৯৩৭ কোটি, পোল্ডার নম্বর ১৫ তে ৯৯৭ কোটি এবং পোল্ডার নম্বর ৩১ এ ১২ শত কোটি টাকা খরচ হবে। এছাড়া পোল্ডার নম্বর ৫ এ আমরা ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের চিন্তা আমাদের রয়েছে, যাও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।এগুলো হলে সাতক্ষীলা এলাকার লোকজনের দুঃখদুর্দশা লাঘব হবে।

    তিনি বলেন, নদী তীরে সাধারণ যে বাধ তৈরি হয় তাতে দেড়কোটি টাকা খরচ হয় আর ব্লক দিয়ে করছে ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। তাও ছোট নদীতে, বড় নদীতে ব্লক দিয়ে একই পরিমান বাধ নির্মান করতে ৭০ কোটি টাকা খরচ হয়। এতে বিশাল অংকে টাকার প্রয়োজন। তারপরও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সাবলম্বী ও শক্তিশালী হওয়ায় আমরা এসব কাজ করতে সাহস পাচ্ছি। সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আর মনে রাখতে একটা প্রকল্পের চিন্তা করলেই হবে না, তা বাস্তবায়ন হতে ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগে। কারণ এরমাঝে টেকনিক্যালসহ নানান কাজে সময় লাগে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে আমাদের অবস্থানটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা কমে আসবে।

    ইতিহাস বলে নদীর এক পার ভাঙ্গে, গড়ে এটাই চারিত্রিক বৈশিষ্ট। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নদীকে ড্রেজিং করে, শাসন করে, নদীর গতিবিধিটাকে সুন্দর ও সোজা করতে। পলি পড়ার কারনে নদীর ভেতরে ডুবন্ত চর হয়, এটা খালি চোঁখে দেখা যায় না। তখন পানির স্রোতের ধারা পরিবর্তন হয়ে যেদিকে যাবে সেদিকের পার ভাঙ্গতে থাকবে।

    বরিশালের চরবাড়িয়াতে নদী তীর রক্ষার কাজ করা হচ্ছে। চরকাউয়ার জন্যও প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বরিশাল শহরের জলবদ্ধতা বন্ধ করার জন্য একটি প্রকল্প তারাতারি দেয়ার জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। যে ৫ টি খাল দিয়ে নদীর পানি শহরের ভেতরে প্রবেশ করে সেগুলোকে পুনঃখনন করতে হবে এবং স্লুইজ গেট দেয়া হবে যাতে পানি শহরের মধ্যে ঢুকতে না পারে কিন্তু শহর থেকে পানি বের হতে পারে। এছাড়া ফ্লাড ওয়াল উচু করে দেয়া হবে যাতে জোয়ারের সময় পানি এসে শহরে না ঢুকতে পারে। এটা হলে বরিশাল শহর নদীর পানিতে প্লাবিত হবে না। বরিশালবাসীকে আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে একটি সুন্দর শহর উপহার দিতে পারবো।

    নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে পশ্চিম রুপাতলী এলাকায় নদীর ভাঙ্গন পরিদর্শনে যান মন্ত্রী। এরআগে বরিশাল নগরীর ২৭ নম্বর ওয়অর্ডের ইন্দুরকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিবৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারের কারনে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাধে ত্রানসামগ্রী বিতরণ করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিম।

    এসময় তার সাথে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শফিউদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র দাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    পবিপ্রবিতে মিথ্যা অভিযোগে র‌্যাগিং ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

    পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৯...