বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোডে ২২নং ওয়ার্ডস্থ যুবক হাউজিং এর সম্মুখে ২য় দফায় প্রবাসীর স্ত্রীর ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন করেছে মহসিন খান বাশার। এই লোক এলাকাবাসীর কাছে বলে বেড়াচ্ছে এবার খোদ বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তাকে স্টল নির্মাণ করতে মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। এবার আর কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না। তবে বাশারের এ দাবীর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং সরকারী জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে কড়া এ্যাকশন নেয়ার নির্দেশনা জারি করে রেখেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক যুবরত্ন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এমনটাই নিশ্চিত করেছে বিসিসির দায়িত্বশীল সূত্র।
উল্লেখ থাকে যে, বাশার কর্তৃক প্রবাসীর স্ত্রীর ১৫০ পয়েন্ট জমি ও বিসিসির ৫০ পয়েন্ট জমির সাথে স্থানীয় রেজাউল করিমের চলাচলের ১৫০ পয়েন্ট জমি দখল করে সেখানে উক্ত টিনের স্টল নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছে বাশার।
সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন দোকান ঘরের জায়গায় গত ২ বছর পূর্বে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক স্টল নির্মাণ করেছিল মহসিন খান বাশার। তৎকালীন সময়ে স্টল নির্মাণ করা জমির আংশিক মালিক নাসরিন বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক পরিমাপ করে অভিযোগের সত্যতা পায় নগর কর্তৃপক্ষ। পরে বিসিসি ও নারীর জমিতে প্লান বহির্ভূত অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপসারণে দখলকারী বাশারকে নোটিশ প্রদান করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। নোটিশ পেয়ে জমি দখলকারী বাশার অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করায় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বে র্যাব পুলিশের যৌথ টিম এবং বিসিসি সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বাশারের সেই অবৈধ স্টল। এসময় উচ্ছেদ করা জায়গায় লাল পতাকা দেয়াসহ লাল মার্কিংও করে দেয়া হয়েছিল। উচ্ছেদ অভিযানের প্রায় ১ বছর চুপচাপ থাকলেও ফের মহসিন খান বাশার চলমান লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই পটুয়াখালীর ২নং চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মোমেন সিকদারের স্ত্রী নাসরিন বেগমের নবগ্রাম ওয়ার্ডস্থ যুবক হাউজিং এর সম্মুখে ক্রয়কৃত সাড়ে ৭ শতাংশ জমি থেকে ১৫০ পয়েন্ট জমি ও বিসিসির ৫০ পয়েন্ট জমি দখল করে ২য় দফায় টিন দিয়ে স্টল নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন করেছে বহু অপকর্মের অনুঘটক মহসিন খান বাশার। যা জমির মালিক নাসরিন বেগম স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম (বার)কে মোবাইলে অবহিত করলে তিনি নারীকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন।
জমির মালিক নাসরিন বেগম এ প্রতিবেদককে জানান- আমার ক্রয়কৃত সাড়ে ৭ শতাংশ জমি থেকে চলাচলের রাস্তার ১৫০ পয়েন্ট জমি দখল করে স্থানীয় আব্দুল রশিদ খানের ছোটপূত্র মহসিন খান বাশার গত ২ বছর পূর্বে পাকা স্টল নির্মান করে ছিল। তখন আমি পুলিশ প্রশাসন ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ দিলে বিসিসি কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে গিয়ে পরিমাপ করে অভিযোগের সত্যতা পায়। আমার দখলকৃত জমির সাথে বিসিসি জায়গায়ও পরিমাপ করে লাল মার্কিং করে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েলের উপস্থিতিতে বাশার কর্তৃক দখলকৃত দোকান ঘর ভেঙে দেয়। ভেঙে ফেলার এক বছর অতিবাহীত হবার পর চলমান লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই ৫ জন কাঠ মিস্ত্রি নিয়ে আমার ১৫০ পয়েন্ট জমি ও বিসিসির জমি দখল করে পূনরায় সেখানে টিনের দোকান ঘর নির্মাণ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারছি না। কারন আমি থাকি পটুয়াখালীতে। আমার স্বামী থাকে সৌদি আরব। আমি লকডাউনের মধ্যে বরিশাল যেতে পারবো না সেটা বাশার বুঝতে পেরে লকডাউনের সময়কে মূখ্যম সুযোগ হিসাবে বেছে নিয়ে আমার জমিতে ২য় দফায় স্টল নির্মাণ করে যাচ্ছে। আমি অবৈধ দখলদার বাশারের হাত থেকে নিস্তার পেতে প্রশাসনের জরুরী আশু দৃস্টি কামনা করছি।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মহসিন খান বাশার বুলি উড়িয়ে বলে বেড়াচ্ছে এবার আর কেউ আমার স্টল উচ্ছেদ করার ক্ষমতা রাখে না। কারন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সাথে কথা বলেই এখানে স্টল নির্মান করছি। সাদিক ভাই আমাকে এখানে দোকান নির্মান করতে মৌখিক অনুমতি দিয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, বাশার এবার কৌশলী ভূমিকা দিয়ে স্টল নির্মান করে যাচ্ছে। কারন প্রথম দফার পাকা স্টল বিসিসি গুড়িয়ে দেবার পর ২য় দফায় নির্মিত স্টল তৈরি করছে পুরানো টিন দিয়ে। এবার যদি উচ্ছেদ করা হয় তাহলে আর্থিক ক্ষতি হবে কম। কারন গত বছর পাকা স্থাপনা নির্মান গুড়িয়ে দেয়ায় বাসারের প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সে ঘনিষ্ঠদের কাছে অনুযোগ করেছে। তাই ২য় বার পুরানো টিন দিয়ে স্টল করে যাচ্ছে। এবারও যদি উচ্ছেদ করা হয় তাহলে ক্ষতির পরিমান কম হবে। সাথে বাশার বুদ্ধি এটে রেখেছে ২য় দফায় বিসিসি উচ্ছেদ করতে আসলে সে উচ্ছেদ টিমকে জানিয়ে দিবেন উক্ত এলাকায় কারা কারা সরকারী জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মান করেছে। তার দোকান উচ্ছেদ করলে সেগুলোও উচ্ছেদ করতে হবে। তাহলে শুধু সে একাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না অন্যান্য দখলকারীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আর সেটা সামনে থেকে উচ্ছেদ টিমকে দেখিয়ে দিবেন বাশার।
এবিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি ও আরআই শাখায় এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানায়, সরকারী জায়গায় বাণিজ্যিক স্টল নির্মাণ করা হলে তা ভেঙে ফেলা হবে। লকডাউন উঠে গেলে উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
তিনি আরও জানান, মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ স্যারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে বিসিসির আওতাধীন সরকারী জায়গা কেউ দখল করলে সেখানে দ্রুত অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করার। মেয়র স্যারের কড়া নির্দেশ বিসিসি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে থাকে। বিসিসির বিন্দু পরিমান জায়গাও কেউ দখল করতে পারবে না।