১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এক মহতী উদ্যোগ নিলেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্রহীন, প্রশিক্ষণহীন লক্ষ লক্ষ সাহসী মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস দামাল ছেলেরা যুদ্ধ করে করে দেশকে করে পাকহানাদার মুক্ত। দেশ হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ।
এ মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের সন্তান বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী নবী আলী মৃধা নামক এক সাহসী যোদ্ধা। যুদ্ধকালীন সাহসী যোদ্ধা নবী আলী মৃধার নেতৃত্বে পশ্চিমা পাকহানাদার বাহিনীর যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র, গোলা-বারুদ খাদ্য, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন মালামাল বোঝাই দুটি নৌযান বাউফলের দ্বিপাশা এলাকা থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আটক করে পাকহানাদার বাহিনীর রোষানলে পড়েন। দুটি নৌযান ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার আক্রোশে পাকহানাদা বাহিনী স্থানীয় রাজাকার,আলবদরদের সহায়তায় মেজর নাদির পারভেজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা নবী আলী মৃধার বসতঘরটি আগুন দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও পরদিন রাজাকারদের খবরে ক্যাপ্টেন ইয়ামিনের নেতৃত্বে পাকবাহিনী পুনঃরায় নর-পিশাচের সশস্ত্র দল বগা, দ্বিপাশা এলাকায় কনকদিয়া নদীর শাপলাখালী তালুকদার বাড়ির ঘাটে গানবোট ভিড়িয়ে এলাকা ঘেড়াও করে দাঁড়িয়ে থেকে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে বসতঘরটি পুড়ে ছাই করে দিয়ে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধা নবী আলী মৃধাকে আটক করতে পাকবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। এ খবরে যোদ্ধা নবী আলী মৃধা তারদলনিয়ে অন্যত্র গিয়ে যুদ্ধ করেন। ৯মাস যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে বাড়ি ফিরে এসে দেখে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। সব হারিয়েও মুক্তিযোদ্ধা নবী আলী মৃধা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়েন। তিনি বগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করে মানুষের কল্যাণে কাজ করে মানুষের মন জয় করেন ।
বলাবাহুল্য যে, তিনি বগা ইউনিয়নে সাত সাতবার ইউপি মেম্বর নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক সু-খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ২০১২ সালে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নবী আলী মৃধার এসব বীরত্বগাঁথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জেলা প্রশাসন ১৬ মে জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বগা-বাউফল আরএইচডি (রাজনগর শাপলাখালী- কালিশুরী জিসি) ভায়া কনকদিয়া হাট (আইডি নং ৫৭৮৩৮২০০৪) রাজনগর থেকে (ভায়া-শাপলাখালী) আমিরাবাদ বাজার পর্যন্ত সড়কটি বীর মুক্তিযোদ্ধা নবী আলী মৃধার নামে নামকরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নবী আলী মৃধার ছেলে নজরুল ইসলাম মৃধা জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরীকেসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান।