নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থ-বানিজ্যের মাধ্যমে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলা ও গৌরনদী পৌর বি.এন.পি’র কমিটি গঠনের প্রতিবাদে ও ঘোষিত কমিটি প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ঝাড়ু মিছিল করেছে পদ বঞ্চিত বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আজ রবিবার বেলা ১১ টায় বরিশাল নগরীর বিএনপি কার্যালয় সম্মুখে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে পদ বঞ্চিত বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বরিশাল উত্তর জেলা বি.এন.পি’র আহবায়ক ও সদস্য সচিবের কুশপুত্তলিকা দাহ করে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষনা করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়া উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন বলেন, দলের দুর্দিনে সরকার বিরোধী আন্দোলনে আমরা মামলা হামলার শিকার হয়েছি। ইতিপূর্বে যারা কোন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেয়নি বা মামলা হামলার শিকার হয়নি ও যাদের সাথে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের সাথে কোন রকম সম্পর্ক নেই তাদের তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানিনা।
সমাবেশের সভাপতি উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর হেসেন মিলন বলেন, ত্যাগী ও যোগ্য নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে অর্থ-বানিজ্যের মাধ্যমে গত ১১ ফেব্রুয়ারি গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলা ও গৌরনদী পৌর বি.এন.পি’র কমিটি গঠন করেছে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান মোঃ শহিদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল। ঐ সকল কমিটির নির্বাহী পদগুলোতে এসেছে জাতীয় পার্টির প্রেতাত্ম ও ১/১১-এর দোসররা। এদের হাতে কমিটির নেতৃত্ব থাকলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক ঘোষিত জনগনের ভোটারাধিকার প্রতিষ্ঠা ও আগামী দিনের নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের আন্দোলন মুখ থুবরে পরবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দল।
তিনি বলেন, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কে. এম. শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান মুকুল ১১ ফেব্রুয়ারি গৌরনদী উপজেলা-পৌর ও আগৈলঝাড়া বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করেছে। আহবায়ক শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মুকুল অর্থ বানিজ্যের মাধ্যমে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে ১/১১র কুশীলব এর দোশরদের নিয়ে কমিটি ঘোষনা করেছে। যাদের সঙ্গে দলে তৃনমূল নেতাকর্মীর কোন সম্পর্ক নাই। এমন কি তারা ১/১১র পর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত নিজ এলাকায় শুধু অনুপুস্থিতই নয় তারা দলছুট সুবিধাবাদি- ঢাকাবাসি। তারা দলের বিরুদ্ধে স্বরযন্ত্রকারী চক্র।
তিনি অভিযোগ করেন, গৌরনদী উপজেলা কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব নামে একজন অসুস্থ্য বৃদ্ধকে। যিনি জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদারের এপিএস এবং জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন তিনি চরিত্রহীন ও লম্পট। তাই গত ১৭ বছরে এক দিনের জন্যও এলাকায় আসেননি। সৈয়দ সরোয়ারের ছোট ভাই একজন প্রবাসী ধর্নাঢ্য ব্যক্তি। তার কাছ থেকে শহীদুল্লাহ দেওয়ান ও মিজানুর রহমান মুকুল মোটা অংকের টাকা নিয়ে আহবায়ক পদ বিক্রি করেছেন। আর সদস্য সচিব করেছেন জহীর সাজ্জাদ হান্নান শরীফকে। হান্নান শরীফ এরশাদের ছাত্র সমাজের নেতা ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বরিশাল-১ আসনের প্রার্থীকে পরাজিত করতে স্বরযন্ত্র করেছিল হান্নান শরীফ গংরা। রাজ পথে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ত্যাগী ও নির্যাতীতদের বাদ নিয়ে ১/১১র কুশীলব, একজন সাবেক সাংসদ সদস্যর দোষরদের নিয়ে গৌরনদী পৌর বিএনর কমিটি গঠন করা হয়েছে যা তৃনমূল নেতাকর্মীরা প্রত্যখান করেছে।
এছাড়া আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে একজন বৃদ্ধ অসুস্থ্যকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে ঢাকার ব্যবসায়ী বশির আহম্মেদ পান্নাকে। পান্না গত ২০ বছরেও এলাকায় আসেননি। টাকা দিয়ে আগৈলঝাড়া সদস্য সচিব পদটি কিনে নিয়েছেন। পদ বানিজ্য করতে বরিশাল উত্তর জেলা কমিটির আহবায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান মুকুল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিনিয়ত অরাজনৈতিক ও অসাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। সাংগঠনিক টিম গঠন না করেই গৌরনদী উপজেলা ও পৌর সভা এবং কমিটিসহ সকল (ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড) ইউনিট বিলুপ্তি ঘোষনা করেছে। একই নির্বাচনী এলাকার সদস্যদের সাংগঠনিক টিমে টিম প্রধান ও সদস্য পদে রাখার বিধান না থাকলেও অনিয়ম করে টিমের সদস্য করেছে। টিম লিডার নিজ উপজেলায় কোন নির্বাহী পদে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন। কিন্তু, হিজলা উপজেলার টিম লিডার গৌরনদী উপজেলার সদস্য সচিব পদে প্রার্থী হিসেবে আবেদনপত্র জমা দিলেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই। গৌরনদী উপজেলা, গৌরনদী পৌরসহ সকল ইউনিট বিলুপ্তি ঘোষনার এক মাস পরে সাব-কমিটি গঠন করেছেন, যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও অসাংগঠনিক। কতিপয় জেলা সদস্যকে সাংগঠনিক টিমে অর্ন্তভুক্ত করে পুনরায় বিনা কারনে ও বিনাম নোটিশে তাদেও বাদ দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সাংগঠনিক টিমে নতুন সদস্য দিয়ে টিম পুনঃগঠন করা হয়। বরিশাল উত্তর জেলা কমিটির আহবায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান মুকূল দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী না করে স্বার্থ হাসিলে সবচেয়ে বেশী মনোযোগী ছিলেন বলে দাবি করেন ।
বরিশাল উত্তর জেলা আহবায়ক কমিটি গঠনের কিছুদিন পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের অহংকার দেশ নায়ক তারেক রহমান মহোদয়ের সঙ্গে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের স্কাইবিতে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আমাদের প্রতি নেতার নির্দেশনা ছিল, ” যারা বয়স্ক তারা উপজেলা কমিটিতে থাকতে পারবেন না। তাদের জেলায় অবস্থান দিয়ে উপজেলা নেতৃত্ব তরুনদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। লিডারের আরো নির্দেশনা ছিল, যারা পরিবার পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকেন তাদেরকে বাদ দিয়ে এলাকায় বসবাসকারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কে.এম. শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান মুকুল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনা অমান্য করেছে। তারা গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটিতে ৭৫/৮০ বছরের বয়স্ক ও অসুস্থাকে অর্থের বিনিময়ে আহবায়ক করেছে। ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী বশির আহম্মেদ পান্নাকে আগৈলঝাড়ার সদস্য সচিব করেছে