রমজান এলেই খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। বিশেষ করে দেশের মোট চাহিদার অর্ধেক খেজুর বিক্রি হয় এই সময়ে। রমজান মাস যতই ঘনিয়ে আসছে খেজুরের দাম ততই বাড়ছে। খেজুরের দাম প্রতি কার্টন (5 কেজি) ৩০০টাকা থেকে টাকার বেশি হয়েছে। শুধু খেজুর নয়, রমজান এলেই আপেল, কমলা, আঙুর, বেদানাসহ জনপ্রিয় বিদেশি ফলের চাহিদা বেড়ে যায়।
চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় এক শ্রেণির আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা তাৎক্ষণিকভাবে খেজুর ও ফলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতা, পরিবহন খরচ বেশি এবং ক্রয় ব্যয়ের কারণে খেজুর ও অন্যান্য ফলের দাম বেড়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন কালবেলাকে বলেন, ডলারের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ দাম বাড়াচ্ছেন, বিশ্ববাজারে সে পরিমাণ বাস্তবে বাড়েনি। খেজুর এবং ফল ভাল মজুদ আছে. খেজুর ও ফলের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। এসব বাজারে কোনো তদারকি নেই। নজরদারি থাকলে ভোক্তারা উপকৃত হতেন। যেহেতু বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীরা প্রকৃতপক্ষে তাদের উপযুক্ত হিসাবে দাম নির্ধারণ করে। যেহেতু তারা লাভবান হয়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বার্ষিক খেজুরের চাহিদা প্রায় এক লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টন।
কালবেলা পত্রিকা অনলাইন থেকে সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ ফিড অনুসরণ করুন
এদিকে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ বালাই নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯১ হাজার ৯০৪ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৩ হাজার ৮১১ টন খেজুর আমদানি হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, এবার ন্যায্য মানের খেজুর আমদানি করা হয়েছে। খেজুরকে খুব ভালো বলা যাবে না, খারাপও বলা যাবে না। তবে পোকামাকড় বা পচা খেজুর আমদানি করা হয়নি। কিন্তু এবার সব নতুন তারিখ আমদানি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে সৌদি আরবে দুই মৌসুমে খেজুর বিক্রি না হওয়ায় গত বছর খেজুর ছিল সস্তা। ফলে গত বছর আমদানিও বেশি ছিল। তবে এ বছর খেজুরের ক্রয়মূল্য বেশি কমেছে। এ ছাড়া ডলারের উচ্চমূল্যই খেজুরের দাম বাড়ার কারণ।
ব্যবসায়ীরা জানান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইরান, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, জর্ডান ও মিশর থেকে বাংলাদেশে খেজুর আসে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইরাক থেকে আসা জাহেদী খেজুর, যা বাংলা খেজুর নামে গ্রামে গ্রামে প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়। অন্যদিকে আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুর ও কিশমিশ বেশির ভাগই আমদানি করা হয় ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও চীন থেকে।
খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসকে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শফিউল আজম টিপু কালবেলাকে বলেন, ডলারের দাম বেশি থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ক্রয়মূল্য বেশি কমেছে। যার কারণে এ বছর খেজুরের দাম বেশি। এই ব্যবসায়ী বলেন, খেজুরের দাম বাড়লেও বাজারে খেজুরের কোনো অভাব হবে না। তবে দাম তেমন কমার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, গত বছর ১০ কেজি জাহেদী খেজুরের প্যাকেট ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর তা ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মরিয়ম খেজুরের পাঁচ কেজির প্যাকেট এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ২০০ টাকায়। আর মাবরুম খেজুর মানের উপর নির্ভর করে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। আজওয়া খেজুর মণপ্রতি ২৬৫০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। এ বছর মাসরুক খেজুর বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়, গত বছর একই খেজুর বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৬০০ টাকায়।
খেজুর আমদানিকারক অ্যারাবিয়ান ডেটস সুপার শপের মালিক জয়নাল আবেদীন আবির কালবেলাকে বলেন, খেজুরের আমদানি খরচ গত বছরের তুলনায় কমেছে, তাই খেজুরের দাম বেশি। তবে বাজারে খেজুরের কোনো অভাব হবে না। রমজানের কারণে নয়, আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় খেজুরের দাম বেড়েছে।
ফলমন্ডির একটি পাইকারি খেজুর বিক্রেতা আজওয়া ট্রেডার্স আমদানিকারকের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে খেজুর বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আজওয়া ট্রেডার্সের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন নয়ন কালবেলাকে বলেন, এক মাসে প্রতি ক্যারেট খেজুরের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। মূলত আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকে ঘিরে দুই মাসের ব্যবধানে চীন থেকে আমদানি করা এক নং ফুজি আপেলের ২০ কেজি ক্যারেট/প্যাকেটের দাম বেড়েছে প্রায় ১২০০-১,৩০০ টাকা। বর্তমানে ১ নম্বর ফুজি অ্যাপ