বাকেরগঞ্জে শহীদ সুধীর কুমার স্মৃতি পাঠাগার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি দখলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের অপচেষ্টার অভিযোগ করেছেন বাসদ নেতা ডা. মনীষা চক্রবর্তী। আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী, বরিশালের বিশিষ্ট আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট তপন চক্রবর্তী, বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য দুলাল মল্লিক, শহিদুল ইসলাম, সন্তু মিত্র, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সদস্য ফজলুর রহমান, ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান রাকিব, সদস্য লামিয়া সাইমুন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বরিশাল জেলার অন্তর্গত বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে শ্যামপুর গ্রামে বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী, পিতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট তপন চক্রবর্তী ও পিতামহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুধীর কুমার চক্রবর্ত্তীর এই তিন পুরুষের ভিটা । এর সপক্ষে হালনাগাদ রেকর্ড, এসএ খতিয়ান, সিএস খতিয়ান, সম্পত্তির যাবতীয় দলিলপত্র, এ যাবৎকালের সমস্ত খাজনা-দাখিলা ও সম্পূর্ণ জমিতে তাদের দখল বিদ্যমান। তাদের পরিবার বরিশালে অবস্থান করায় তাদের কিছু বর্গাচাষী জমি চাষ করতো ও বসতভিটা দেখাশোনা করতো। গত ৪ বছর আগে তাদের এই বসতভিটায় ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর পিতামহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সুধীর কুমার চক্রবর্ত্তীর নামে একটি দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র ও পাঠাগার স্থাপন করা হয়। যেখানে গ্রামের মানুষদের প্রতিমাসে ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীসহ বিভিন্ন ডাক্তারদের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ঔষধ প্রদান করা হতো। এখানে বাসদের পক্ষ থেকে শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণ ও নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছিল।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পাঠাগার উদ্বোধনের সময় রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশীর আহমেদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদিকা পুষ্প চক্রবর্ত্তী, বাসদ বরিশাল জেলার আহবায়ক ইমরান হাবিব রুমন, সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এই জমির সিংহভাহ অংশজুড়ে দুঃস্থদের সহযোগিতা, কর্মসংস্থানের জন্য বরিশাল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, মৎস অধিপ্তরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় প্রাকৃতিক কৃষি খামার করা হয়।
এই উদ্যোগে গ্রামের মানুষেরা উপকৃত হলেও বর্গাচাষীরাসহ একটি কুচক্রি মহল বিভিন্ন সময় নানারকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। এই কুচক্রি মহলটি এই জমি আত্মসাতের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে আসছিল। এরা ইতিপূর্বে শহীদ সুধীর কুমার স্মৃতি পাঠাগার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা ভেঙে হামলা চালিয়েছিল যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মামলা চলমান আছে ও আসামীদের অপরাধ ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। এই মামলার আসামী মজিবর গাজী, সুজন গাজী, শহিদুল গাজী ডা: মনীষার পৈতৃক ভিটায় পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এই গাজী পরিবারকে ভিটার দেখাশোনা ছেড়ে চার বছর আগে থেকেই অন্যত্র স্থানান্তর হতে বলা হয়। সেসময় বাকেরগঞ্জ থানায় তৎকালীন ওসির মধ্যস্থতায় তারা গতবছরের জুলাই মাসের মধ্যে তাদের নিজ বাড়িতে চলে যাবার জন্য স্ট্যাম্পকাগজে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। কিন্তু জুলাই থেকে নয় মাস অতিক্রান্ত হলেও তারা তাদের নিজ বাড়িতে না গিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
শ্যামপুরে বাসদের বার্ষিক মিলনমেলা করার জন্য গত ১লা মার্চ ডা: মনীষা চক্রবর্তী শ্যামপুরে ভেন্যু নির্ধারণ করতে যান। সেখানে তাদের নিজ বাড়ির উঠানে একটি কাঠের লাকড়ি রাখার পরিত্যাক্ত ঘর সরিয়ে তারা মিলনমেলার জন্য উঠান পরিষ্কার করেন। গাজী পরিবার এই ঘটনাকে উচ্ছেদের নাটক সাজিয়ে এলাকায় প্রচার করে ও নিজেরাই নিজেদের মালামাল সরিয়ে নেয় ও মূল ভিটাবাড়ির কিছু টিন-তক্তা সরিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি সমাধানের জন্য তাদের থানায় ডাকলেও তারা সমাধানে অস্বীকৃতি জানান।