রাজধানীর এফডিসি সিগন্যালে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি ও আউটসোর্সিংয়ের প্রতিবাদে রেললাইন অবরোধ করে আন্দোলন করছেন রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা। ফলে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সকাল ১০টায় খবর পেয়েছি যে, এফডিসি সিগন্যালে রেললাইন অবরোধ করে রাখা হয়েছে। রোববার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টায় এফডিসি রেলগেট এলাকায় রেললাইনের ওপর ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী শ্রমিকবৃন্দ’ ব্যানারে অবস্থান শুরু করেন তারা। এসময় তিতাস কমিউটার ট্রেন আটকে দেন শ্রমিকরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা রেলওয়ে শ্রমিকরা বলেন, গত ১ জুলাই থেকে আমাদের চাকরি থাকছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাস আমাদের বিনা বেতনে চাকরি করতে হবে। আমাদের এখানে একেকজনের কাজের বয়স ৫ থেকে ১০-১২ বছর পর্যন্ত। এতদিন আমরা রেলওয়েতে সার্ভিস দিলাম, কিন্তু রেলওয়ে আমাদের মূল্যায়নই করল না।
রেলওয়ে শ্রমিক মো. এমরান আক্ষেপ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেলওয়েতে আমার চাকরির বয়স সাত বছর। আমরা এখানে অভিজ্ঞ। অথচ আমাদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। বিনা বেতনে চাকরি করলে যেন থাকি আর না করলে যেন চলে যাই— এ নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ের ডিআরএমরা (বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার)।
গেটম্যান হীরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বারবার রেল ভবনে এ বিষয়ে স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদেরকে বাদ দিয়ে তারা ঠিকাদারের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। আমরা চাই আমাদের চাকরিটা ফেরত দেওয়া হোক। কারণ এ মুহূর্তে আমাদের আর অন্য কোনো চাকরি করার বয়স নেই। এতদিন রেলওয়ের সঙ্গে থেকে শেষ বয়সে এসে না খেয়ে মরব, সেটা তো হতে পারে না।
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দেওয়া তথ্য মতে, রেলওয়ের জনবল সংকট নতুন কিছু নয়। জনবল সংকট দূরীকরণে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি শূন্য পদের বিপরীতে এতদিন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন অস্থায়ী শ্রমিকরা।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সকাল ১০টায় খবর পেয়েছি যে, এফডিসি সিগন্যালে রেললাইন অবরোধ করে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা বলেন, রেলের ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পদে অস্থায়ীভাবে মোট ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। আমাদের মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স ৩-১০ বছর। বর্তমানে অনেকের বয়স ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অন্য কোথাও চাকরি করার বয়স নেই।
তারা বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে কখনোই আউটসোর্সিং পদ্ধতি ছিল না। বর্তমানে আমাদের অস্থায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার জন্য এটা চালু করা হয়েছে। আমরা এই আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল ও চাকরি ফেরত পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যা আমাদের জীবন ধ্বংস করার পদ্ধতি বলে বিবেচিত।