স্টাফ রিপোর্টারঃ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন না রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুসহ ১৪–দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা। উল্টো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া ছয়টি আসনের কয়টিতে জোটের শরিকেরা জয় পাবেন, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি জোটের শরিক তিনটি দলকে মোট ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে জাসদকে ছাড়া হয়েছে কুষ্টিয়া–২, বগুড়া-৪ ও লক্ষ্মীপুর–৪ আসন। ওয়ার্কার্স পার্টি পেয়েছে বরিশাল-২ ও রাজশাহী-২ আসন এবং জেপি ছাড় পেয়েছে পিরোজপুর-২। এসব আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন শরিক দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
বিএনপির বর্জনে এবারও যাতে ২০১৪ সালের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশির ভাগ সংসদ সদস্য জয়ী হতে না পারেন, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কৌশল নেওয়ার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ। আর এতেই বিপদে পড়েছেন শরিক দলের নেতারা। তাঁরা চেয়েছিলেন সমঝোতার আসনগুলোতে যেন স্বতন্ত্রদেরও তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করেনি।
জোটের শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নির্বাচন করছেন কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা কামারুল আরেফিন। আওয়ামী লীগের দুটি উপজেলার নেতারা এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তবে গুটিকয় নেতা ইনুকে সমর্থন দিয়েছেন।
হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের মাঠে জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তাঁরা অনুরোধ করে আসছেন যেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকে। কিন্তু সেটা এখনো অব্যাহত আছে। এতে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি হচ্ছে। তবে এটা কাটিয়ে ভোট করতে অসুবিধা হচ্ছে না।
মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আলীম বলেন, ‘যেহেতু দলের সভানেত্রী বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। ভোটকেন্দ্র ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি রাখতে হবে। তাই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করা হচ্ছে।
জোটের আরেক শীর্ষ নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে। এখানে আওয়ামী লীগের দুজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম এবং উপজেলা কমিটির সদস্য ফাইয়াজুল হক। তৃণমূলের কর্মীদের বড় অংশ এ দুজনের সঙ্গে। ফলে মেননকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। জন্মস্থান বরিশাল হলেও রাশেদ খান মেনন গত ২৮ বছর এখানকার কোনো আসন থেকে নির্বাচন করেননি।
বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তাজের আলী প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদ খান মেনন জাতীয় নেতা হলেও স্থানীয় লোকজনের কাছে তাঁর আগের যোগাযোগ নেই। তাই তাঁর জন্য নির্বাচনটা শেষ পর্যন্ত কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
তবে রাশেদ খান মেননের সমর্থক নেতারা বলছেন, শুরুতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও এখন পরিস্থিতি দিনে দিনে অনুকূলে আসছে। বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তি নয়, প্রতীক মুখ্য। নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক। তাই এর বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে সমস্যা নেই বা ছিল না তা নয়। কিন্তু তাঁরা তা নিরসনের চেষ্টা করছেন।
জোটের আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নৌকা প্রতীকে লড়ছেন পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া, নেছারাবাদ) আসনে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। মঞ্জুর প্রতীক নৌকা হলেও আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা–কর্মী তাঁর পক্ষে মাঠে নেই। তাঁরা কাজ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহারাজের পক্ষে। অবশ্য কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম আবদুস শহিদ ও নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সহিদ উল আহসান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর–৪ আসনে জোটের প্রার্থী জাসদের সহসভাপতি মোশারফ হোসেন। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বেশির ভাগই দলের স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর পক্ষে। রাজশাহী-২ আসনে ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গেও মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান। মহানগর আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে শফিকুর রহমানের পক্ষে মাঠে নেমেছে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম (তানসেন)। এখনো নৌকার সঙ্গে মাঠে দেখা যায়নি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।
[প্রতিবেদনের তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা।