ঢাকার বাড্ডা থানার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে বৈষম্য বিরোধী জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত মো. হাসান সরদার (২১) কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন।
বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়ায় এই ২১ বছরের যুবক শরীরে ৪শ’ স্প্রিন্টার ও ক্ষতের যন্ত্রণা বয়ে বেরাচ্ছে। ডাক্তার বলেছে বাংলাদেশে তার আর চিকিৎসা সম্ভব না। শরীরে অসংখ্য বুলেট যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারছে না। দুই ভাইবোন কলেজে লেখাপড়া করছে। হাসান সরদারের পিতা নেই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন এই হাসান সরদার। পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা ও সাভারে সিআরপিতে থেরাপি নেওয়ার পরে বর্তমানে সে এখন গ্রামের বাড়িতে রয়েছে।
আহত মো. হাসান সরদার উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের দরিদ্র মৃত মানিক সরদারের ছেলে। হাসানরা তিন ভাই—বোন। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে হাসান সবার বড়। গতকাল শনিবার জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত মো. হাসান সরদারের সাথে কথা বললে সে ভয়াবহ দিন গুলোর কথা বলে জানান, আজও মনে পরে জুলাই গণ—অভ্যুত্থানের কথা।
ঢাকার রামপুরা ব্রিজের সামনে ছাত্র আন্দোলনে ১৮ জুলাই পুলিশের গুলি পায়ে লেগে আহত হই। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতেও ভয় পেয়েছি। পুলিশ আবার ধরে নিয়ে যায় কিনা সেই আতংঙ্কে ছিলাম। একটি বাসায় বসে আমি সহ আরো কয়েকজন এক চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নেই।
একটু সুস্থ হয়ে ৫ আগস্ট আবার আন্দোলনে যাই। ওই দিন আন্দোলনে গিয়ে বাড্ডা ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটির সামনে পুলিশ আমাদের উপরে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। আমার ডান হাতে, পাজরে এবং মুখমন্ডলে পুলিশের ছোড়া কয়েকশ’ গুলি লাগে। এতে আমি তখন রক্তাক্ত জখম হই। স্থানীয়রা প্রথমে আমাকে আফতাবনগর নাগরিক হাসপাতালে নেয়। আমার তখন জ্ঞান ছিলোনা।
সকলে মনে করছে আমি মারা গিয়েছি। ওই দিন আমাকে নাগরিক হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখা হয়। তারপরে আমাকে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ৬ আগস্ট আমার জ্ঞান ফিরে এলে আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতে অপারেশন করার কথা বলে আমাকে অপারেশন রুমে নিয়ে যায়। আমাকে অপারেশন না করে অপারেশন রুম থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়।
৭ আগস্ট সকালে আমাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। কুর্মিটোলা হাসপাতাল আমাকে ভর্তি না করে আবার পুনরায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ৭ আগস্ট রাতে পুনরায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হই। কয়েকদিন পরে আমাকে সাভার সিআরপিতে পাঠায় থেরাপি দেবার জন্য। সেখানে থেরাপি শেষে আবার পঙ্গু হাসপাতালে চলে আসি। পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ হই।
এরপরে চিকিৎসকরা বলেছেন, আমার শরীরে যে গুলি রয়েছে তা বাংলাদেশে অপারেশন করে বের করা সম্ভব হবেনা। আমার হাতে ও শরীরে প্রায় ৪শ’ গুলি রয়েছে। এখন আমাকে বিদেশে চিকিৎসা করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। আমি ধার দেনা করে চিকিৎসা করিয়েছি।
বাড়িতে আসার পর কেউ কোনো খবর নেয় নাই। টাকার অভাবে আমার ভাই—বোনের কলেজের ফি দিতে পারি নাই। আমার ঘরে খাবার ছিলোনা। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বনিক জানান, মো. হাসান সরদার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
তিনি আমাদের সরকারি তালিকাভুক্ত একজন আহত ব্যক্তি। বাংলাদেশ সরকার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি মাসে সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে।