More

    পানির স্বাধীনতা লঙ্গিত দ‌ক্ষিনাঞ্চ‌লের নদী খাল ভরাট হয়ে পা‌নি প্রবা‌হের প‌রি‌বেশ হারা‌চ্ছে‌!

    অবশ্যই পরুন

    মোঃ রোকনুজ্জামান শরীফ মঠবাড়িয়া,পি‌রোজপুর: এক সময় নদী ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।কৃষি সেচ মাটির উর্বরতা, জনপদ সৃষ্টির পেছনে কৌশলগত যোগান দিচ্ছে নদী।কোন কোন অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা অনেকাংশেই নদীর উপর নির্ভরশীল।নদীর মৃত্যু হলে ঐ অঞ্চলের জনপদেরও মৃত্যু ঘনিয়ে আসে।

    সামুদ্রিক মাছ প্রজননের সময় নদীতে এসে ডিম দেয়।কিন্তু দ‌ক্ষিনা‌ঞ্চলের নদী,খাল,জলাশয়গু‌লো ভরাট হ‌য়ে পা‌নি প্রবা‌হের প‌রি‌বেশ হা‌রি‌য়ে নাব‌্যতা তৈরী করছে।নৌযান চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে নানা রকম জটিলতা। ব‌ঙ্গোপসাগ‌রের কোলঘেষা জেলা উপ‌জেলা গু‌লোর বেশীরভাগ এলাকা নদী‌বেষ্টীত।কিন্তু নানা কার‌নে নদী খাল ভরাট হ‌য়ে চ‌রের সৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছে‌ ও হয়েছে।নদী খাল ভরাটের পিছনে বহুবিধ প্রাকৃতিক কারন থাকলেও দৃশ্যত মানবসৃষ্ট কারণ-ই বেশি বলে ধারনা করা হচ্ছে।দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় সমগ্র এলাকা পলিমাটি দি‌য়ে গঠিত।এ মা‌টির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পানি পে‌লে সহজে দ্রবীভূত হয়।

    তথ‌্য অনুসন্ধা‌নে জানা গে‌ছে, বর্ষামৌসু‌মে দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে এবং এর উজানে প্রতিবেশী দেশগুলোতে অপেক্ষাকৃত অধিক বৃষ্টিপাত হয়।বর্ষায় উজান থেকে আসা খরস্রোতা নদীগুলো পাহাড়ি পলি বয়ে নিয়ে আসে এবং নদী তীরে ভাঙ্গনের সৃষ্টি করে।অন্যদিকে নদীপাড়ের বৃক্ষ নিধনের ফলেও নদীপাড় ভেঙ্গে মাটি দ্রবীভূত হয়।বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযোগ দক্ষিনাঞ্চলের অসংখ্য ছড়ানো আঁকাবাকা শিরার মত প্রচুর ছোটবড় খাল জলাশয় দখল করে স্হাপনা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

    স্লুইজগেটের ভিতরে খাল ভরাট হয়ে নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।জোয়ার ভাটার পানি চলাচলের প্রাকৃতিক নিয়ম বাধাগ্রস্হ হয়ে ভাটিতে নদীতে স্রোতের গতি কমে যায় তখন নদীগুলোর তলদেশে পলিমা‌টি সঞ্চিত হয়ে ভরাট হয়‌ে নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নদী ও জলাশয়গুলোর দু’ধারে অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়ক,কলকারখানা,আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ ও পয়ঃনিষ্কাশনের নির্গমন স্থান হিসেবে ব্যবহার এবং নদী খা‌লে বাঁধ নির্মাণ অপদখল ও ভরাটের ফলে নদী ও জলাশয়গুলো দ্রুত মরে যাচ্ছে।ঠিকাদারেরা অসংখ্য ব্রীজ কালভার্ট নির্মানের পর পানি চলাচলের জন্য জলাশয় সচল না করে ফেলে রেখে যায়।

    ফলে পানির খরস্রোত ধারা কমে যাওয়ায় নদীর মোহনায় পলি সঞ্চিত হয়ে চর জেগে উঠছে। নদী ও জলাশয়গুলো ভরাটের কারণে বর্ষাকালে পানির প্রবাহধারা বাধাগ্রস্ত এবং দুকূল উপচিয়ে বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।আর শুষ্ক মৌসুমে ঐগুলোতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নৌ চলাচল,কৃষি সেচ ব্যবস্থা ও মাছচাষ ব্যাহত হচ্ছে।প্রাকৃতিক পানির জলাধারের সংরক্ষণ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হওয়ায় শহরগুলোতে পানির সরবরাহ কমে যাচ্ছে ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।নদী,জলাশয়,স্লুইজেট অন্তর্ভুক্ত খালগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করে এদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা।

    পরিকল্পিত ও পরিবেশ উপযোগী বাঁধ এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।প্রয়োজনে অপদখলীয় নদী ও জলাশয় উদ্ধার,অপরিকল্পিত বাঁধ অপসারণ, পাহাড়কাটা রোধ, কলকারখানার পাশে বাধ্যতামূলক বর্জ্য পরিশোধন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের ব্যবস্থা করা।ভারত,নেপাল ও চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গা,তিস্তা,ব্রহ্মপুত্র ও ফেনীসহ অন্যান্য নদীগুলোর ন্যায্যতার ভিত্তিতে পানির হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে।নদীকে তার গতিপথে চলতে দিতে হবে।

    সামগ্রিক পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে বিদ্যমান পরিবেশ আইন যুগোপযোগী ও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে,রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে অসংখ্য খাল দখলে রেখে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মান করা হয়েছে।কৃষি মৎস্য পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলে ভূক্তভোগীদের পরিবেশ রক্ষা বাঁধ অপসারনের পক্ষে আন্দোলন সংগ্রামের সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশ,তদন্ত প্রতিবেদন নির্দেশনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা,দলীয় দ্বিধাবিভক্তী প্রভাব,প্রভাশালীদের মামলা হামলার ভয়ের কারনে যুগ যুগ ধরে একাধিক জলাশয় খালের বাঁধ অপসারণ করা যাচ্ছে না।

    এছাড়াও ভূঅভ্যন্তরস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস করে নদীর পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।কলকারখানা,ইটভাটা নদী থেকে দুরে নির্মান করতে হবে।সামাজিক সংগঠন,এনজিও ও সরকারকে কাজ করতে হবে।নদী রক্ষায় প্রয়োজনে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    নেপালে যেভাবে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পথ

    জেন–জি প্রজন্মের গণআন্দোলনের পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল অন্তর্বর্তী...