একসময় আগুনের উত্তাপ আর হাতুড়ির খনখনানিতে মুখর থাকত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী বাজার এলাকার কামার পট্টি। শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী এই বাজারের কামার শিল্প ছিল গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের পরিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন স্মৃতির পাতায়।
একসময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কামার পট্টিতে জ্বলত আগুন। লাঙল, দা, কোদাল, কাস্তেসহ কৃষিকাজ ও গৃহস্থালির নানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি হতো স্থানীয় কামারদের নিপুণ হাতে। আশপাশের গ্রামের কৃষকরা কৃষি সরঞ্জামের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতেন এই বাজারের কামারদের ওপর। স্থানীয় কামাররা জানান, একসময় বছরের অধিকাংশ সময়ই তাঁদের ব্যস্ততা থাকতো। বিশেষ করে কৃষি মৌসুম এলেই কাজের চাপ বেড়ে যেত। লাঙল ও কোদাল তৈরিতে রাত-দিন পরিশ্রম করতে হতো।
কিন্তু আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি ও কারখানা তৈরি প্রস্তুত সরঞ্জাম সহজলভ্য হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী হাতের তৈরি সরঞ্জামের চাহিদা এখন অনেকটাই কমে গেছে। পাশাপাশি লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে আয় কমে যাওয়ায় অনেক কামার পরিবার ঐতিহ্যবাহী এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, সঠিক উদ্যোগ নিলে কামার শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আধুনিক প্রশিক্ষণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ ঋণ সুবিধা এবং পণ্যের বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা গেলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প নতুন প্রাণ ফিরে পেতে পারে।
কামার শিল্প শুধু একটি পেশা নয়, এটি গ্রামীণ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। আধুনিকতার স্রোতে শতবর্ষী এই শিল্পের জৌলুস ম্লান হয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে হাতুড়ির সেই পুরোনো ছন্দ আবারও ফিরে আসতে পারে।
