More

    বরিশালে সরকারি জমিতে আ.লীগ নেতার বাণিজ্য, প্রশাসনের দ্বিমুখী আচরণ

    অবশ্যই পরুন

    বরিশাল সদর উপজেলার ৩নং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ লামছড়ি বাজার সংলগ্ন এলাকায় বছরের পর বছর ধরে দখলকৃত সরকারি জমিতে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। ওই জায়গায় বহুবছর আগে একটি পাকা দোকানঘর নির্মাণ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন প্যাদা, যিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। বর্তমানে সেই দোকানঘরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তার ছেলে মোহাম্মদ কাওসার হোসেন।

    স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, ক্ষমতার প্রভাব ও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে তিনি সরকারি জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেন, অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কেবল দখলই নয়, রয়েছে একাধিক ফৌজদারি মামলা।

    এই দখলদার আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক ফৌজদারি মামলা। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের করা অন্তত তিনটি মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। মামলা নং-৫৫৮: (২৩-৮-২০২৪), মামলা নং-৬২২: (২৮-৯-২০২৪)। মামলা নং-৭১৪: (১৬-১১-২০২৪)। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, মামলাগুলোতে মারামারি, হুমকি, হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুরের অভিযোগ রয়েছে। তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

    প্রশাসন একবার অভিযান চালিয়েছিল, কিন্তু…। চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. শাহীন আলমের নেতৃত্বে গত ৩ আগস্ট একটি সরকারি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে দখলকৃত নব-নির্মিত একতলা পাকা দোকানঘর ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, একই খতিয়ানের অন্তর্গত আরেকটি দোকানঘর, যা বহু আগে থেকেই ইসমাইল হোসেন প্যাদা নির্মাণ করেছেন এবং যেখানে তার ছেলে ব্যবসা করছেন তা এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।

    ‘ক্ষমতা থাকলে সব চলে’ এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয় বিএনপি নেতা কবির মৃধা জানান, এই দোকানঘরটি সরকারি খাস জমিতে অবস্থিত, এবং সবাই তা জানে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। তিনি বলেন, এই দোকান বহু বছর ধরে কাওসার চালাচ্ছে।

    সবাই জানে এটা সরকারি জায়গা, কিন্তু প্রশাসন নিরব। আমরা শুধু ভাবি, আমাদের হলে কী হতো?” জনদাবি: অবিলম্বে দখলমুক্তকরণ ও তদন্ত। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয় এবং প্রভাবের কারণে বারবার প্রশাসন একচোখা ভূমিকা পালন করছে। সাধারণ মানুষের প্রতি যে আইন কঠোর, সেটি প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে যেন প্রয়োগ হয় না। বছর বছরের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নীরবতা যেন প্রভাবশালীদের উৎসাহিত করছে।

    একদিকে একাধিক মামলার আসামি হয়ে সরকারি জমি দখল করে ব্যবসা করা হচ্ছে, অন্যদিকে উচ্ছেদের সময় দাগভিত্তিক পরিপূর্ণ তালিকা ও বাস্তবায়নে অনীহা প্রশাসনের পক্ষেই প্রশ্ন তুলছে। স্থানীয়রা বলেন, “যদি আমরা সাধারণ কেউ একটা ইটও রাখতাম সরকারি জমিতে, তাহলে পরদিনই তা তুলে নিয়ে যেত ভূমি অফিস। আর এখানে বছরের পর বছর ব্যবসা হচ্ছে কোনো পদক্ষেপ নেই!”

    এ প্রেক্ষিতে তারা বরিশাল সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলামের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শুধু একদিনের অভিযান নয়, পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের মাধ্যমে কারা কত বছর ধরে সরকারি জমি দখল করে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হয়নি, এবং প্রশাসনের দায় কোথায়, তা খতিয়ে দেখতে তারা বিশেষ ভূমি তদন্ত টিম গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

    বরিশাল সদর উপজেলার মানুষের স্বার্থে এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। আমরা আশা করি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রশাসনিক দৃঢ়তা ও আইনের ন্যায্য প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন। শুধু অভিযানে গিয়ে একটি দোকান গুঁড়িয়ে দিলেই হবে না, সম্পূর্ণ এলাকায় যেসব সরকারি জমি বেহাত হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করে সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। তারা এই দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

    এ বিষয়ে বরিশাল সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সরকারি জমি দখলদারদের ছাড় দেওয়া হবে না।”

    চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম বলেন, অভিযানে আমরা একটি অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছি। বাকি বিষয়গুলো সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    শর্ত পূরণ করলে নতুন পজিশনে দেখা যাবে নেইমারকে

    ইনজুরির কারণে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠের বাইরে রয়েছেন নেইমার জুনিয়র। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ দুই ম্যাচ দিয়ে জাতীয়...