বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা অঙ্গনে নতুন এক নাম—আরাফাত হোসেন সামির। তিনি শুধু একজন সাইবার বিশেষজ্ঞ নন, বরং দেশের ডিজিটাল সীমান্তের এক অনন্য প্রহরী, যিনি দিনরাত লড়ে যাচ্ছেন প্রযুক্তির অন্ধকার দিক থেকে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
ঢাকার সাভার উপজেলার উত্তর রাজাশন এলাকায় জন্ম নেওয়া সামিরের জীবনের মোড় ঘুরে যায় ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন তার ফেসবুক-সংযুক্ত একটি গেমিং অ্যাকাউন্ট সাইবার হামলার শিকার হয়। প্রথমে এটি ছিল একটি হতবাক করা অভিজ্ঞতা, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি পরিণত হয় তার জীবনের এক বড় মিশনে—দেশের মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষায় আজীবন লড়াই।
ঘটনার পর তিনি স্বশিক্ষায় ঝুঁকে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গবেষণা, অনলাইন টিউটোরিয়াল, ফোরাম আলোচনায় অংশগ্রহণ, আর নিরলস চেষ্টার মাধ্যমে তিনি আয়ত্ত করেন সাইবার প্রতিরক্ষার জটিল কৌশল। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি হয়ে ওঠেন এক দক্ষ ‘সাইবার ওয়ারিয়ার’, যিনি ২০১৮ সাল থেকেই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ, মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং হ্যাকিং প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
২০১৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ব্ল্যাক সাইবার—একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা অল্প সময়েই দেশের সাইবার প্রতিরক্ষা ও ডিজিটাল সচেতনতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি আয়োজন করেছে অসংখ্য সাইবার সচেতনতামূলক সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও অনলাইন ক্যাম্পেইন।
এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন বহু সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আইটি পেশাজীবী এবং প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ-তরুণী। তাদের একটাই লক্ষ্য—বাংলাদেশকে ডিজিটাল হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তির সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
সামিরের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার—“সাইবার নিরাপত্তা শুধু একটি প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তার অংশ”। তার বিশ্বাস, জ্ঞান, শ্রম ও সততার সমন্বয়ে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বমানের সাইবার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অর্জন করবে।
বর্তমানে তিনি বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে যাচ্ছেন, মানুষকে ফিশিং, স্ক্যাম, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডেটা লিক থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। তার উদ্যোগের ফলে অসংখ্য সাধারণ মানুষ সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা পেয়েছেন, যা তাকে দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রযুক্তির এই চ্যালেঞ্জপূর্ণ যুগে, আরাফাত হোসেন সামির হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের এক সত্যিকারের সাইবার অভিভাবক—যিনি প্রতিদিন অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে লড়ে যাচ্ছেন, যাতে আপনি, আমি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ডিজিটাল পৃথিবীতে নিরাপদ থাকতে পারি।