More

    মৌসুমের শেষ দিকে বরিশালে ইলিশের দাম বাড়ল আরেক দফা

    অবশ্যই পরুন

    ভারতে ইলিশ রপ্তানির প্রভাব পড়েছে বাজারে। গতকাল বুধবারও বরিশালের ইলিশ মোকামে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মোকামে যে পরিমাণ ইলিশ আসছে, প্রায় সবটাই কিনছেন রপ্তানিকারকরা। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ হচ্ছে ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চলের অন্য মোকামেরও একই চিত্র।

    ইলিশ মৌসুম অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে শেষ হতে পারে। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই চলছে ইলিশ সংকট। সাগর-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না মেলায় এখনও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
    দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
    ৫ অক্টোবরের মধ্যে এক হাজার ২০০ টন রপ্তানি করা হবে। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়।

    বিভিন্ন মোকাম ঘুরে জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করবে তারা তিন-চার দিন আগে থেকেই ইলিশ মজুত শুরু করেছে। তখন থেকে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। রপ্তানিযোগ্য ইলিশের সর্বনিম্ন ওজন ৬০০ গ্রাম। ফলে ৬০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ স্থানীয় বাজারে মিলছে না। মোকাম থেকেই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এসব আকারের ইলিশ কিনে নিচ্ছেন।

    বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামের চারটি প্রতিষ্ঠান মাহিমা এন্টারপ্রাইজ, নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, তানিসা এন্টারপ্রাইজ ও এ আর এন্টারপ্রাইজ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। মাহিমা, নাহিয়ান ও তানিসা এন্টারপ্রাইজের মালিক হলেন কার্যক্রম স্থগিত মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তিনি ভারতে আত্মগোপনে আছেন।

    গতকাল সকালে পোর্ট রোড মোকামে টুটুলের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর প্রতিনিধিরা ইলিশ কেনায় ব্যস্ত। এই তিন প্রতিষ্ঠান কত টন রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে, এ পর্যন্ত কী পরিমাণ
    ইলিশ কিনেছে– এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে তারা রাজি হয়নি।

    আরেক ব্যবসায়ী ও মৎস্য শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, রপ্তানি অনুমোদন পাওয়া মোকামের চারটি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের অন্য জেলায় অনুমোদন প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধিরা দুই থেকে তিন দিন আগে ইলিশ কিনে মজুত করছেন। রপ্তানিযোগ্য আকারের ইলিশ যা আসছে, বেশির ভাগই তারা কিনছেন। ওই ইলিশের যে দাম, তার ক্রেতা স্থানীয় বাজারে খুব কম। একই তথ্য জানান লিয়া এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক রুবেল হাওলাদার।

    ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য বলছে, গতকাল  এ  মোকামে এক কেজি কিংবা তার বেশি ওজনের ইলিশ পাইকারিতে বিক্রি হয় ২০ মণের মতো। এ ইলিশের কেজি বিক্রি হয় দুই হাজার ২৫০ টাকা।  ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মোকামে এসেছিল প্রায় ২৫ মণ, যার পাইকারি দর ছিল প্রতিকেজি দুই হাজার টাকা।

    স্থানীয় বাজারে সরবরাহ হয় ৫০০ গ্রাম ওজন কম আকারের ইলিশ। তিনটিতে এক কেজি– এমন আকারের ইলিশের পাইকারি দর ছিল প্রতিকেজি এক হাজার ৫০ টাকা এবং চারটিতে এক কেজি– সেটার দর ছিল ৭৫০ টাকা।

    খুচরা বিক্রেতারা আরও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে সব আকারের ইলিশের দাম কেজিতে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা কম ছিল।

    দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মাছের মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা। সেখানে দরের বিষয়টি বরিশাল মোকামের চেয়ে ভিন্ন। ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য বলছে, গত দুদিনের চেয়ে গতকাল প্রতিমণে ১০ হাজার টাকা কমেছে। এ মোকামের কোনো প্রতিষ্ঠান রপ্তানি অনুমতি পায়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, তাদের সরবরাহের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ইলিশ
    মজুত করছেন। তারাই একজোট হয়ে দাম কমিয়েছেন। মজুত করায় স্থানীয় বাজারে ইলিশ নেই বললেই চলে।
    জানা গেছে, রপ্তানি অনুমতি পাওয়া

    পাবনার সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং করপোরেশনের প্রতিনিধি কামাল হোসেন আরও দুদিন আগে পাঁচ টন ইলিশ মজুত করেন। আগাম কেনার কথা স্বীকার করে কামাল
    জানান, তাদের  ইলিশ বোঝাই দুটি ট্রাক আগেই বেনাপোলে পৌঁছে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এ জন্য তারা গতকাল ইলিশ কেনেননি।

    মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় সিনিয়র সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এ বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ দৃশ্যমান অনেক কম। যে কারণে মৌসুমের
    শুরু থেকেই দাম অস্বাভাবিক। তিনি জানান, মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে প্রতিবছর আশ্বিনের অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে ২২ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সে হিসাবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে পারে। নিষেধাজ্ঞা শুরুর সঙ্গে শেষ হবে এ বছর ইলিশের ভরা মৌসুম।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    অনেক কাজ করেছি, যা দেশের ইতিহাসে হয়নি: আসিফ নজরুল

    আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অল্প সময়ে তিনি এমন অনেক কাজ করেছেন, যা দেশের...