যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার গাবখালি গ্রামের ১৬ টি পরিবার এখনো নিজেদের পৈত্রিক পেশাকে ধরে রেখে মৃৎশিল্পের কাজ করে চলেছে। মৃৎশিল্প আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। দেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে।
এ জন্য মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা যায়। একসময়ে মেলা মানেই ছিল মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের বিচিত্র সমাহার। শিশুদের খেলার রংবেরঙের মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, পালকি,নৌকা, পাখি, টমটম গাড়ি, ব্যাংকসহ আরও কতো কি পাওয়া যেতে মেলায়। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
আজকাল কুমারপাড়ার নারী-পুরুষেরা ব্যস্ত সময় পার করেন না। কাঁচা মাটির গন্ধ তেমন পাওয়া যায় না সেখানে। হাটবাজারে আর মাটির তৈজসপত্রের পসরা বসে না। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য। এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কুমার বলা হয়। অতীতে গ্রামের সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হতো মাটির জিনিসপত্র।
রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, খাবারের সানকি, মটকি, সরা ইত্যাদি। পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি। বৃহস্পতিবার (২ আক্টোবর) দূর্গা পূজার শেষ দিনে (বিজয়া দশমী) যশোর জেলার মনিরামপুর থানার ঢাকুরিয়া বাজারে দেখা মিলেছে এমন কিছু মাটির তৈরি জিনসের দোকান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারটা দোকানে মাটির উপর চট বিছিয়ে মাটির তৈরি শিশুদের খেলার রংবেরঙের মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, পালকি,নৌকা, পাখি, টমটম গাড়ি, ব্যাংকসহ আরও কতো কি বিক্রি করছে। দামে কম তবে ক্রেতা নেই বলে অভিযোগ করছে বিক্রেতারা।
মৃৎশিল্পের কারিগর ও দোকানদার গণেশ পাল বলেন, আমারা যুগ যুগ ধরে এই পেশার সাথে যুক্ত আছি। তবে বর্তমানে প্লাস্টিকের যুগে আমাদের এই শিল্পের কদর হারায় গেছে। আগের মত আর বেঁচাবিক্রি না থাকায় আমাগে সন্তানগে এই কাজে জড়াতে চাই না।
আরেক দোকানদার কার্তিক পাল বলেন, পূজার সময় হলে বিভিন্ন জাগায় দোকান নিয়ে যাই। সেখানে কিছু কিছু বিক্রি করতে পারে তবে অন্য সময় আমাগে এই সব জিনিস বিক্রি হয় না। কেঁনা বেচার যে ধরণ তা বেশিদিন আর বাপ দাদার পেশা ধরে রাখতে পারবো বলে মনে হয় না।’