প্রতিবছরের মতো এবারও নিষিদ্ধ সময়ে পদ্মাপাড়েই বসছে ইলিশের অস্থায়ী হাট। দেখে মনে হয় ওই এলাকায় যেন ডিমওয়ালা ইলিশ ধরার প্রতিযোগিতা চলছে। মাছ ধরে তা আবার পদ্মা পাড়েই বিক্রি করা হচ্ছে। এটা মাদারীপুর শিবচরের পদ্মাপাড়ের প্রতিবছরের চিত্র হলেও প্রশাসন আর জেলেদের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলছেই।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা, মাদবরেরচর, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পদ্মা নদীতে জেলেরা মাছ ধরছেন। পরে পাড়েই অস্থায়ী হাট বসিয়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে। মাছ কিনতে এসব এলাকায় ভিড়ও দেখা যায়। দাম বেশি, তবুও মানুষজন জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ কিনছে দেদারছে। সারারাত চলে মাছ ধরা।
ভোরে আর বিকেলে হাট বসিয়ে তা বেশি বিক্রি করা হয়। শিবচরের পদ্মার পাড়ের কাজিরসূরা ও হীরাখাঁ এলাকায় সবচেয়ে বেশি মাছ বিক্রি হচ্ছে। চরাঞ্চল হওয়ায় প্রশাসন আসার খবর আগে থেকেই পেয়ে যান জেলেরা। জেলেরা কৌশলে প্রবেশমুখে লোক বসিয়ে রাখেন। তারা খবর দিলেই সরে পড়েন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। তাছাড়া পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময় প্রশাসন অভিযানে গেলে, তা বুঝতে পেরে জেলেরা দ্রুত সরে যান। প্রশাসনের লোকজন চলে এলে আবার তারা মাছ ধরা শুরু করেন।
এভাবেই নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা কৌশলে মাছ ধরে তা আবার বিক্রি করে থাকেন। ইলিশ কিনতে আসা মফিজ হাওলাদার বলেন, আমি পাচ্চর থেকে এসেছি। মূলত পদ্মার পাড়ে ঘুরতে এসেছিলাম। এসে দেখলাম তাজা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তাই আমিও কিনে ফেললাম। নাম না প্রকাশ করে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারের মাছগুলো কয়েকটি প্রসেসিংয়ের পর হাতে পাই। কিন্তু এখানকার মাছগুলো একদম তাজা থাকে। তাই শিবচরের কাঁঠালবাড়ির এই এলাকায় মাছ কিনতে এসেছি।
আধা মণের মতো কিনে রাখবো। নাম না প্রকাশে কয়েকজন জেলে বলেন, মাছ ধরে বিক্রি না করলে খাবো কী। পরিবারের লোকজনকে তো না খেয়ে থাকতে হবে। তাছাড়া বিক্রি ভালো হচ্ছে। মাছও প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। মানুষজন একসঙ্গে ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রশাসন অভিযান চালালে তখন দাম কমে বিক্রি করতে হয়। এরইমধ্যে অনেক জেলেকে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে আটক করে জেল-জরিমানাও করেছে। এরমধ্য দিয়েই আমরা মাছ ধরে তা বিক্রি করছি।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম ইবনে মিজান বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ বিক্রি করছেন। তাই আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। এরইমধ্যে বেশি কিছু জেলেকে আটক করে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও তারা এই কাজ করছে। জানতে পেরেছি পদ্মার পাড়ে হাট বসিয়ে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের লোকবল কম। তাই সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ওইসব স্থানে অভিযান চালানো হবে।