বিখ্যাত নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘দেয়াল’ উপন্যাসের অংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি সোমবার ট্রাইব্যুনালে জানান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে টঙ্গীতে সংঘটিত এক নবদম্পতি হত্যা ও নববধূ ধর্ষণের ঘটনায় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হস্তক্ষেপে দায়মুক্তির অভিযোগ উঠে আসে।
সেই তথ্যের ভিত্তিতে ‘দেয়াল’ উপন্যাস থেকে কয়েকটি পৃষ্ঠা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন তিনি। উপন্যাসের ওই অংশে বর্ণিত রয়েছে, এক নবদম্পতি গাড়িতে যাচ্ছিলেন। টঙ্গীর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল দলবল নিয়ে গাড়িটি আটক করে। তারা ড্রাইভার ও নববধূর স্বামীকে হত্যা করে এবং নববধূকে গণধর্ষণ করে। তিন দিন পর টঙ্গী ব্রিজের নিচে নববধূর লাশ পাওয়া যায়।
ভয়াবহ এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর বিশেষ অভিযানে দায়িত্বরত মেজর নাসেরের হাতে মোজাম্মেল গ্রেফতার হন। মেজর নাসেরকে মোজাম্মেল বলেন, “ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন, তিন লাখ টাকা দেব। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাব।” কিন্তু মেজর নাসের তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “তোমাকে অবশ্যই ফাঁসিতে ঝুলাবার ব্যবস্থা করব।”
পরবর্তীতে মোজাম্মেলের পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মোজাম্মেলকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানান। টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকে বলেন, “মোজাম্মেলকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে, মেজর নাসের তাকে তিন লাখ টাকা দাবি করে ধরেছে।”
বঙ্গবন্ধু তখন উপস্থিত সবার অভিযোগ শুনে বলেন, “কান্দিস না, কান্দার মতো কিছু ঘটে নাই। আমি এখনো বাইচ্যা আছি, এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।” এরপর তিনি মোজাম্মেলকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং মেজর নাসেরকে টঙ্গী থেকে সরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন।
মুক্তি পাওয়ার পর মোজাম্মেল মেজর নাসেরকে তার বাসায় পাকা কাঁঠাল খাওয়ার নিমন্ত্রণ জানান। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাসের এই অংশটি ঐ সময়ের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং তা মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।