রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: অবশেষে বরিশালের বানারীপাড়ায় শিক্ষাগত যোগ্যতার মিথ্যা তথ্য দিয়ে উপজেলার বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়া সেই বিএনপি নেতা সবুর খানকে অপসারন করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকীর নির্দেশে বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ থেকে বিএনপি নেতা সবুর খানকে অপসারন করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল সভাপতি পদ থেকে সবুর খানকে বাদ দেওয়া সংক্রান্ত বোর্ডের চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মোঃ রফিকুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত ওই পত্রে সবুর খানকে বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বায়েজিদুর রহমানকে সভাপতি মনোনীত করে বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ থেকে সবুর খানকে বাদ দিয়ে ইউএনওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে স্থানীয়রা শুধু পদ থেকে অপসারনই নয় জালিয়াতি-প্রতারণা ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তার শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার (১৩ অক্টোবর) দীর্ঘ দিনেও অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগকারী উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের মামুন ফরাজীর পক্ষে সোমবার (১৩ অক্টোবর) বরিশাল জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট এম আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন (তুহিন) ও শাহিন হোসেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকীকে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
ওই নোটিশ পাঠানোর নিউজ মঙ্গল ও বুধবার (১৪ ও ১৫ অক্টোবর) সমকালসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়। এরপরেই সভাপতি পদ থেকে সবুর খানকে অপসারনের চিঠি স্কুলের ই-মেইলে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলার বাইশারী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খানকে সভাপতি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল কমিটির সভাপতি হতে হলে তাকে কমপক্ষে স্নাতক পাশ হতে হবে।
বানারীপাড়ার বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কমিটি গঠনের সময়ে দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে সবুর খান নিজেকে
বিএ পাস উল্লেখ করেন। কিন্তু এর অনুকূলে তিনি তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কোনো কপি জমা দেননি।
অভিযোগকারী স্থানীয় মামুন ফরাজীর দাবী ছিল বাইশরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুস সবুর খান তার বায়োডাটায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিএ পাস উল্লেখ করেছেন।
মূলত তিনি এসএসসি পাস। বিএনপির নেতা হয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রায় দেড়শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তার বিএ পাসের তথ্য যাচাইয়ের জন্য বোর্ড নির্ধারিত ৫ হাজার টাকা ফি জমা দিয়ে গত ২৮ আগস্ট তিনি আবেদন করেন।
মামুন ফরাজীর লিখিত ওই আবেদন করার প্রায় এক মাস পরে বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে সহকারি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব বিদ্যালয় নিবন্ধন) মোঃ মাছুম মিয়া গত ২৩ সেপ্টেম্বর বানারীপাড়ার বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেন।
কিন্তু গত ২২ দিনেও আবেদনকারীকে এর ফলাফল প্রদান ও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছিল না ফলে বোর্ড চেয়ারম্যানকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। অপরদিকে পরস্পরের যোগসাজশে ওই বিদ্যালয়ের রিজার্ভ ফান্ড থেকে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক
অবসরে যাওয়ার পরেও প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সম্প্রতি সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফকরুল আলম ও সদ্য অপসারিত সভাপতি সবুর খানের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশালের আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে মামুন ফরাজী লিখিত অভিযোগ করেন। এ বিষয়টিও তদন্তনাধীন রয়েছে।