More

    ১৭ বছর পর চরকাউয়া খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার অপেচষ্টা

    অবশ্যই পরুন

    বরিশাল নগরী সংলগ্ন চরকাউয়া খেয়াঘাট ১৭ বছর পর ঘাট ইজারা দেওয়ার অপেচষ্টা চালােনো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মিডিয়া থেকে আড়াল করে রাখলেও ভেতরের খবর হচ্ছে তারা খেয়াঘাটটি ইজারা দেওয়ার জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। খুব দ্রুতই তারা দরপত্র আহ্ববান করবে।

    খবরটি শুধু মিডিয়া পাড়ায় নয় ঘাটের মাঝিমাল্লা পর্যন্ত পৌছে গেছে। রোববার সকালে বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে মাঝি মাল্লারা বন্দর কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে লাখো মানুষের পারাপারের এই ঘাটে কেন দরপত্র আহ্ববান করা হবে। এতে কার স্বার্থ জড়িত রয়েছে সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। এদিকে রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন-নির্বাচনকে সামনে রেখে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানে সদর আসনে বিএনপির ভোট কমানোর একটি অপকৌশল।

    বর্তমানে এ ঘাটে ইঞ্জিনচালিত নৌকা রয়েছে ১০৫টি। মাঝিমাল্লা সমিতির নামে গঠর করা একটি সমিতির মাধ্যমে ঘাটটি সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের অন্যান্য খেয়াঘাটের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় (মাত্র ৫ টাকা) পাড়ি দিতে পারছেন সাধারণ মানুষ। সেখানে দরপত্র আহ্ববান করা হলে দ্বিগুন থেকে তিনগুন হয়ে যাবে। তথ্য বলছে- ২০০৮ সালের আগে এই ঘাটটি ইজারার আওতায় ছিলো। তখন চরম বিশৃঙ্খলা ছিলো ঘাটের দুই পাড়ে। কিন্তু মাঝিমাল্লা থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের দাবি ছিলো ঘাটটি দরপত্রের আওতামুক্ত করা। দাবীর প্রেক্ষিতে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ সাধারন মানুষের দাবি মেনে নিয়ে ঘাটটি ইজারামুক্ত করেন।

    তখন জনপ্রতি ভাড়া ছিলো মাত্র ২ টাকা। সেই থেকে অদ্যবদি ঘাটটি উম্মুক্ত রয়েছে। কিন্তুু সম্প্রতি ঘাটটি পুনরায় ইজারা দেওয়ার জন্য পায়তারা শুরু করে বরিশাল বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, দরপত্র আহ্ববান করা হলে সবাই জানবে। এখন এ নিয়ে আগাম কিছু বলতে চাইনা।

    তিনি বলেন- দরপত্র হবে কি হবে না এটা নিয়ে আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষের চাওয়া পাওয়া নিয়ে কিছু আসে-যায় না। সরকার চাইলেই কেবল দরপত্র আহ্ববান হবে। খেয়া ঘাটের মাঝি কামরুল বলেন- দাদা থেকে বাবা, এখন আমি ঘাটের মাঝি হিসাবে মানুষ পারাপার করছি। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি যখন ঘাট ইজারাধীন ছিলো তখনই কেবল ঘাটে বিশৃঙ্খলা ছিলো। মাঝি থেকে শুরু করে যাত্রীদের মধ্যে অস্থিরতা। ইজারা থাকলে যাত্রী ভোগান্তি অনেকগুনে বেড়ে যায়। বিভিন্ন পক্ষ চাঁদাবাজী শুরু করে। ২০০৮ সাল থেকে আমরা মাঝি ও যাত্রী সাধারন এইসব সমস্যা থেকে মুক্ত আছি।

    এখন বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি ঘাট আবার ইজারা দেওয়া হবে। আমার প্রশ্ন এত বছর পরে এটা কেন? আরেক মাঝি শহিদ বলেন- সকাল থেকে দুইভাগে আমরা মাঝিরা খেয়া চালাই। তাতে খরচ বাদ দিয়ে ৪-৫’শ টাকা নিয়ে বাসায় ফিরতে পারি। বর্তমানে যে ভাড়া আছে যাত্রীরাও তাতে খুশি। কিন্তু ইজারা চালু হলে আমাদের মাঝিদের চেয়ে ক্ষতি হবে যাত্রীদের। ভাড়া কয়েকগুন বেড়ে যাবে।

    মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন- ঘাট ইজারা দেওয়ার খবর আমাদের কাছে এসেছে। এ খবর জানামাত্র আমরা বিএনপি নেতারা ঘাট ইজারার বিরোধীতা করেছি। আমাদের নেতা এ আসনের সাবেক চারবারের এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার বন্দর কর্তৃপক্ষকে ঘাট ইজারা না দিতে অনুরোধ করেছেন। তারপরও যদি বন্দর কর্তৃপক্ষ সাধারন মানুষের চাওয়া পাওয়ার বাইরে গিয়ে ঘাট ইজারা দেয় সাধারন মানুষ তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।

    মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিসির সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আলতাফ মাহমুদ সিকদার বলেন- ২০০৮ সালে সাধারন মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ঘাট ইজারামুক্ত করার ঘোষণা দেন। তখন আমি প্যানেল মেয়র ছিলাম। আমরা সকল কাউন্সিলর মেয়রের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি। সেই থেকে ঘাট ভালভাবেই পরিচালনা হয়ে আসছে।

    তাহলে এখন কেন হঠাৎ করে ইজারার কথা আসবে। সাধারন মানুষ যেটা না চায় সরকার কিংবা বন্দর কর্তৃপক্ষকে কেন সেটা করতে হবে। তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় ইজারা দিতে কোন পক্ষের ইন্ধন রয়েছে। সামনের নির্বাচনে যাতে সাধারন মানুষ বিএনপিকে ভুল বোঝে এটাই ওই মহলের উদ্দেশ্য। আমরা এটা কোনভাবেই হতে দিতে পারি না। জনগন যেটা চায় সেভাবেই ঘাট পরিচালিত হবে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশালে ইসলামপন্থীদের সমাবেশে জনস্রোত, সরকারকে কঠোর বার্তা

    সম্ভবত এই প্রথমবারের মতো বরিশালে বড় ধরনের সমাবেশ করল ইসলাম ধর্মভিত্তিক ৮ টি রাজনৈতিক দল। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে...